শিরোনাম
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষকরে রাজধানীতে এ চিত্র আরও ভয়াবহ।
দাম ঘোষণার পরপর শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বন্ধ হয়ে যায় সিটি পরিবহন। শনিবার সকালেও দেখা গেছে একই চিত্র। গণপরিবহন না পেয়ে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
রাজধানীর বাসাবো, মালিবাগ, খিলগাঁও, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকেই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না নির্দিষ্ট গন্তেব্যের পরিবহন।দু একটা গাড়ি আসলেও তাতে যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। তারপরও গন্তব্যে যেতে গাড়িতে উঠার প্রাণপন চেষ্টা।
বাসাবো থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন জহিরুল হক নামের এক বেসরকারি কর্মকর্তা। তিনি জানান, ৩৫ মিনিট এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোন বাসই পাচ্ছি না। রিক্সা ভাড়াও চাচ্ছে ডাবল। অথচ ৮টায় অফিস ধরতে হবে। তার মতো এমন অসংখ্য যাত্রীকে সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
এদিকে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার পেট্রোল পাম্পগুলোতে দেখা গেছে যানবাহনের উপচেপড়া ভিড়। রাত ১২ টার আগে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় অনেকগুলো পাম্প। এ নিয়ে গ্রাহকদের সাথে পরিবহন মালিকদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে। সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন মালিকরা।
যাত্রীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দ্রুত বাস ভাড়া সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তা না হলে বাসের স্টাফ ও যাত্রীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা চলতে থাকবে। ভাড়া সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত যদি বাসে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হয়, তাহলে সমস্যা দেখা দেবে।
পরিবহন মালিকরা জানান, যে হারে লিটারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, সে হারে ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি রাস্তায় নামানো সম্ভব হবে না। কারণ লস দিয়ে কেউ গাড়ি চালাবে না। এ জন্য দ্রুত সরকারকে ভাড়ার বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাড়া পুর্নির্ধারণ করে দেবে। তা না লস দিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাইবে না কেউ। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, আজ শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে বাস চালাব না। তবে রাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এত দাম দিয়ে জ্বালানি কিনে একই ভাড়ায় আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে যা ভাড়া আসবে তার সব টাকা পেট্রোল পাম্পে দিয়ে আসতে হবে। এতে করে শ্রমিকের বেতনও হবে না। একই সঙ্গে গাড়ির কিস্তিও হবে না। এ কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে, লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিনও লিটারে ৩৪ টাকা দাম বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। পেট্রোলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে লিটার প্রতি ১৩৫ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে।