সাঙ্গুর অভয়াশ্রম থেকে দেদারছে ধরা হচ্ছে মাছ 

ফানাম নিউজ
  ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:২৪

বান্দরবা‌নের সাঙ্গু নদী‌তে এক হেক্টর এলাকায় স‌রকার ঘো‌ষিত মৎস্য অভয়াশ্রমটি অব‌হেলা ও অয‌ত্নে প‌ড়ে আ‌ছে। মা‌ছের প্রজনন, বিলুপ্ত প্রায় মা‌ছের উৎপাদন বৃ‌দ্ধি ও মা‌ছের অবাধ বিচর‌ণের জন্য দুর্গম থান‌চির রেমাক্রী ইউ‌নিয়‌নের তিন্দু‌তে এ অভয়াশ্রমটি গড়ে তোলা হয়। তবে মৎস্য অফিস না থাকা ও দেখভালের জনবল না থাকায় সেখান থেকে দেদারছে ধরা হচ্ছে মাছ। এতে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে রয়েছে। এদিকে বান্দরবান সদ‌রের ভরাখা‌লি‌তে এক হেক্টর এলাকায় এক‌টি অভয়াশ্রমের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাস‌নিক অনুম‌তি না পাওয়ায় মৎস্য সংরক্ষ‌ণে সেখা‌নেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

মৎস্য অ‌ফিস সূ‌ত্রে জানা‌ গে‌ছে, বান্দরবা‌নের দুর্গম থান‌চি উপ‌জেলার সাঙ্গু নদীর উপ‌রের দি‌কে নৌকা প‌থে দুই থে‌কে আড়াই ঘণ্টার পথ পা‌ড়ি দি‌য়ে যে‌তে হয় তিন্দুর মৎস্য অভয়াশ্রমে। এলাকা‌টি অভয়াশ্রম ‌ঘোষণা করা হলেও দুর্গম থান‌চি‌তে নেই কোনও মৎস্য অ‌ফিস। এ কার‌ণে থান‌চি‌তে দেখভালেও কোনও জনবলও নেই।

এসব কার‌ণে অভয়াশ্রম থে‌কে যে যেভা‌বে পার‌ছে মাছ শিকার কর‌ছেন। স্থানীয়রা জানান, অভয়াশ্রম এলাকায় কোনও অফিস ও দেখভালের জনবল না থাকায় সাঙ্গু নদী‌র দারকিনা, চিতল, তেলাপিয়া, চেলা, চেবলি, চাটকিনি, গুরামুইক্কা, মহাশল, পাবদা, চিরিং, বাইম, জাত পুটি, ফান্ডা, বোয়াল, বাটা, পান্ডা বাটা, বামশ, বেলিটুরা, কেচকি, কানকিলা, কাটা চান্দা, কই বান্দি, মৃগেল, বাইলা, গুইল্লা, ছোয়া চিংড়ি, গুচি বাইম, ঘারুয়া বাচ্চা, কুচিয়া, আইড়, শাল বাইম, কই, দেশি মাগুর, টাকি, ঘনিয়া, চিংড়ি, রুই, ভেদা ও কাতলা এ ৩৯টি প্রজাতির অধিকাংশ মাছই প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এ বিষ‌য়ে থান‌চির স্থানীয় সাংবা‌দিক অনুপম মারমা ব‌লেন, তিন্দু‌তে মৎস্য অভয়াশ্রম আ‌ছে শু‌নে‌ছি। ত‌বে কখ‌নও ম‌নে হয়‌নি এ‌টি এক‌টি বিলুপ্ত মাছ সংরক্ষণের বিশেষ এলাকা। কারণ সংরক্ষিত এ এলাকা থে‌কেই জে‌লেরা বে‌শি করে মাছ ধরছেন। 

রেমাক্রীর ইউ‌পি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা র‌নি ব‌লেন, মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা কর‌লে হ‌বে না। এ‌টি পাহারার ব্যবস্থা করে মা‌ছের নিরাপত্তা নি‌শ্চিত কর‌তে হ‌বে। আ‌মার কাছে ওই এলাকা কখ‌নেও মৎস্য অভয়াশ্রম ব‌লে ম‌নে হয়‌নি। কারণ সারা বছরই দে‌খি মানুষ প্রকা‌শ্যে মাছ ধ‌রে। কোনও পাহারার ব্যবস্থা সেখানে নেই। 

তার মতে, ঠিকমতো পাহারার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে অবশ্যই মা‌ছের উৎপাদন বাড়বে। বিলুপ্ত প্রায় মাছেরও সংখ্যা বাড়বে। তি‌নি অভয়াশ্রম রক্ষায় সং‌শ্লিষ্ট কর্তৃপ‌ক্ষের কাছে ‌জোর দা‌বি জানান।

মৎস্য কর্মকর্তা‌দের ম‌তে, থান‌চির তিন্দুতে এক হেক্টর জায়গায় মা‌ছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করো হয়েছে। কিন্তু থান‌চি‌তে কোনও মৎস্য অ‌ফিসই নেই। এ কার‌ণে সংরক্ষিত এলাকাটি পাহারা দেওয়ার লোকবলও সেখানে নেই। এ‌দি‌কে বান্দরবান সদ‌রের ভরাখালী‌তে সাঙ্গু নদী‌তে এক হেক্টর জায়গায় এক‌টি মৎস্য অভয়াশ্রম ‌ঘোষণার জন্য প্রশাস‌নের অনুম‌তির অ‌পেক্ষায় র‌য়ে‌ছে মৎস্য অ‌ধিদফতর। প্রশাস‌নিক অনুম‌তি মিল‌লেই নদীর ওই অংশ‌কে মৎস্য অভয়াশ্রম হি‌সে‌বে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা। তা‌দের ম‌তে, এ মৎস্য অভয়াশ্রমটি চালু হ‌লে বিলুপ্ত প্রায় অ‌নেক মাছের উৎপাদন বাড়বে। 

এ বিষ‌য়ে বান্দরবান অ‌তি‌রিক্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জিয়া উ‌দ্দিন ব‌লেন, থান‌চিতে আমা‌দের কোনও অ‌ফিস না থাকায় সেখা‌নে কোনও জনবলও নেই। এ কার‌ণে মৎস্য অভয়াশ্রমটি পাহারা দি‌তে পার‌ছি না। সেখা‌নে এক‌টি অ‌ফিস চালু হওয়ার প্রস্তাবনা আ‌ছে। অ‌ফিসটি চালু হ‌লে তখন নিরাপত্তা নি‌শ্চিত করা যা‌বে। 

তি‌নি আরও ব‌লেন, বান্দরবান সদ‌রের ভরাখালী‌তেও এক‌টি অভয়াশ্রমের প্রস্তাবনা রয়ে‌ছে। প্রশাস‌নিক অনুম‌তি পাওয়া গে‌লে কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এর ফ‌লে বিলুপ্তপ্রায় মা‌ছের অ‌নেক প্রজা‌তি‌কে পূ‌র্বের অবস্থায় ফি‌রি‌য়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন