শিরোনাম
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু মহা ধুমধামে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ শুধু মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও মাদারীপুরের জাজিরা প্রান্তেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। সেই আনন্দে অংশ নিতে ২০০ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে যান মো. সুজন মিয়া (২৯) নামের এক রাইসমিল শ্রমিক।
মো. সুজন মিয়া ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের রুকনাকান্দা গ্রামের মো. মাহমুদ আলীর ছেলে। তিনি স্থানীয় রাইস মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
ইচ্ছা থাকলেও পারিবারিক অভাব অনটনে কারণে লেখাপড়া করা হয়নি সুজনের। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর আর কোনোদিন স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। তখন থেকেই মানুষের টুকটাক কাজ করে ও ঘোরাফেরা করে দিন কাটাতেন। কিন্তু বাইসাইকেল চালানোর শখ ছিল খুব বেশি। বাইসাইকেল চালিয়ে আগেও অনেক জায়গায় সফর করেছেন। তবে বাইসাইকেল চালিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়াটা তার কাছে ছিল সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ, তিনি সফলও হয়েছেন।
সুজন বলেন, ১৭ বছর যাবত আমি বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করেছি। তবে সাইকেল চালানোর শখ ছিল। যে কারণে আমি নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাই। আমার ইচ্ছা ছিল সাইকেল চালিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে যাব, সেই ইচ্ছা থেকেই গত শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজের বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে রওনা দিই। পরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গিয়ে জুমার নামাজ পড়ি। সেখান থেকে ভালুকা গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও রওনা দেই। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকায় আমার বোনের বাসায় যাই।
পরদিন শনিবার (২৫ জুন) ভোর ৪টার দিকে বোনের বাসা থেকে সাইকেল নিয়ে রওনা করি। পথে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। এক জায়গায় পুলিশ আমাকে চেক করে যেতে মানা করে। পরে অনেক অনুরোধ করার পর পুলিশ আমাকে যেতে দেয়। আমি তো ওইসব জায়গার নাম জানি না। একপর্যায়ে বাইপাস নামক একটি রোড থেকে আমাকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকে গুগল ম্যাপ ও মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে কম করে হলেও ৩০ কিলোমিটার ঘুরে পদ্মা সেতুর কাছে যেতে বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যায়।
সেখানে যাওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য পদ্মা সেতুতে ওঠার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সুযোগে পদ্মা সেতুতে উঠি। সেখানে কেউ কেউ ভিডিও করছেন আবার কেউ কেউ ছবি তুলেছেন। কিন্তু আমার মোবাইলে চার্জ না থাকায় আমি কোনো ছবি তুলতে পারিনি।
সাইকেলে ময়মনসিংহ থেকে পদ্মা সেতু যাওয়ার বর্ণনা দিলেন সুজন মিয়া
তবে কয়েকজন সাংবাদিক ক্যামেরা দিয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর সবাইকে সেতু থেকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু দেখতে পারিনি।
সেখানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তার সঙ্গে কথাও বলেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে দেখার ইচ্ছাপুরণ হলো না। তবে পদ্মা সেতু দেখেছি বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে সাইকেলে করে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকায় বোনের বাসায় এসে থাকি। রাত কাটিয়ে রোববার (২৬ জুন) সকালের দিকে রওনা দিয়ে বিকেলের দিকে বাড়িতে পৌঁছাই।
সুজন বলেন, এর আগেও বাইসাইকেলে করে আমি ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকায় দুইবার গিয়েছি। এছাড়াও নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতির বাড়ি দেখে এসেছি। ঈদের পর শ্রীমঙ্গলে যাব। সাইকেলে আমার সর্বশেষ ভুটানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। এজন্য আমি সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করেন।
মো. আরসব আলী বলেন, সুজন সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। যাওয়ার আগে সে আমার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গেছে। আমি বলেছিলাম, এত দূরে কিভাবে যাবি? সে বলেছিল, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন পদ্মা সেতু দেখতে পারি।
প্রতিবেশী আব্দুল গনি বলেন, সুজন ছোট থেকেই সাইকেল চালায়। সে গত বছরের অক্টোবরে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতির বাড়িতে গিয়েছিল সাইকেলে। সেখান থেকে এসে আমাদের সবাইকে সেখানকার ভিডিও দেখিয়েছিল।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস বলেন, আমি যতদুর জানি, সুজন বাইসাইকেল চালানোতে খুব পারদর্শী। সে পদ্মা সেতু ছাড়াও নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে গিয়েছিল।
সূত্র: জাগো নিউজ