আজব নৌকা নিয়ে পদ্মার পাড়ে জালাল উদ্দিন

ফানাম নিউজ
  ২৫ জুন ২০২২, ০৯:৫৪

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

শনিবার (২৫ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন।

সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নতুন রূপে সেজেছে পদ্মার পাড়। শুক্রবার থেকেই সভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন মানুষ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রেন এমনকি সাইকেলে করেও অনেকেই এসেছেন। এমনকি তিন চাকার গাড়ির উপর বাহারি রঙের নৌকা বানিয়ে ৩০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সভাস্থলে এসেছেন রাজবাড়ীর জালাল উদ্দিন। সেই নৌকায় উঠে গান গেয়ে ও নাচের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন স্থলের আশপাশে মাতিয়ে রাখছেন তারা।

নৌকার নেতৃত্ব দেওয়া জালাল উদ্দিন বলছেন, রাজবাড়ীর স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমের উদ্যোগে ৩০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সভাস্থলে এসেছি। এখানে আমরা ৪ দিন ধরে নৌকায় গান গেয়ে ও নাচের মাধ্যমে সভাস্থল মাতিয়ে রাখছি। পথেই রান্না করে খাচ্ছি।

তিনি বলেন, সেতুতে উঠতে পারবো কিনা বলতে পারছি না। যদি উঠতে পারি তাহলে আমাদের মনের আশা পূরণ হবে।

তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেল পথ। উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুতে দৈনিক ১২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

বিশ্বের খড়স্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।

পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।

পদ্মা সেতুর পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে আমদানি করা, যার একেকটির ওজন একটন। সেতুকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে ফিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং লাগানো হয়েছে; যা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে। বিশ্বে কোন সেতুতে এত শক্তিশালী বেয়ারিং লাগানো হয়নি।

সেতুর পাইলিং ও খুঁটির অংশে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা অতিমিহি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। নদী শাসনে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়, এ কাজে বিশ্বে এতো বড় দরপত্র আর হয়নি।

পদ্মা সেতুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সাধারণ আলোক সুবিধার পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে আর্কিটেকচার লাইটিং।

স্বাভাবিক সময়ে নদীর পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। এর নিচ দিয়ে পাঁচ তলা উচ্চাতার নৌযান চলাচল করতে পারবে।

৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচে নির্মিত পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেতুটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের বুকে এক রোল মডেল।

ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে।

সূত্র: আরটিভি