শিরোনাম
উচ্চ আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে বিশেষজ্ঞ টিম। এরই মধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য ২৪টি উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব নমুনা তিনটি ল্যাবে পরীক্ষার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পানের উপযোগী কি না তা হাইকোর্টকে প্রতিবেদন আকারে জমা দেবে কমিটি।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনকে। সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জোবাইদুল আলম, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রতিনিধি ড. দীপংকর চক্রবর্তী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপ-পরিচালক মো. কামরুল হাসান।
হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে করা হয় এই কমিটি। এরই মধ্যে কমিটি সভা করে নমুনা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার ২৪টি স্পটকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি পানি শোধনাগার, পাঁচটি রিজার্ভার, ১০টি বিতরণ পয়েন্ট এবং চারটি গ্রাহক পয়েন্ট।
পাঁচ শোধনাগার হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২, মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, মোহরা পানি শোধনাগার এবং কালুরঘাট আয়রন রিমুভ্যাল প্লান্ট ও বুস্টিং স্টেশন।
পাঁচটি পানির রিজার্ভার হলো চট্টগ্রাম ওয়াসার নাসিরাবাদ রিজার্ভার-১, নাসিরাবাদ রিজার্ভার-২, লাভলেইন গভীর নলকূপ, বাটালী হিল রিজার্ভার এবং হালিশহর এলিভেটেড ট্যাংক।
এছাড়া ১০টি পানি বিতরণ পয়েন্ট হলো পতেঙ্গার বুস্টার স্টেশন, ডিটি রোড বুস্টার স্টেশন, হালিশহর বি ব্লক, হালিশহর ঈদগা কাঁচারাস্তা, আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এরিয়া, জামাল খান, বহদ্দারহাট চান্দগাঁও আবাসিক, চকবাজার, পারসিভিল হিল, মুরাদপুর মোহাম্মদ আবাসিক এলাকা এবং বাকলিয়া কেবি আমান আলী রোড এলাকা। এরই মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ের চারটি পয়েন্ট হলো বড়পুল হালিশহর জি-ব্লক, মেহেদীবাগ আমীরবাগ আবাসিক এলাকা, প্যারেড কর্নার সিরাজউদ্দৌল্লাহ রোড এবং খাজা রোড বাদামতল এলাকা।
এসব স্থান থেকে সংগ্রহ করা নমুনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাব, বিসিএসআইআর’র ল্যাব এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে।
এর আগে ঢাকা ওয়াসার পানি ব্যবহার অযোগ্য নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এসব প্রতিবেদন নিয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে এক আইনজীবী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। ওই রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠনে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল চার সদস্যের কমিটি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে।
এরপর এই কমিটি ঢাকা ওয়াসার ৩৪টি পয়েন্টের পানির নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে। পরে সেই প্রতিবেদন ২০১৯ সালের ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি স্পটের নমুনার মধ্যে আটটি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর রিটকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের (২০২২ সাল) ৬ মার্চ বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে দেখার আদেশ দেন। পানি পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। আদেশ অনুসারে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য কমিটি করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জোবাইদুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির মান পরীক্ষার জন্য উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪টি স্পট থেকে পৃথকভাবে তিনটি করে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পানিতে কী কী জীবাণু রয়েছে সেগুলো পরীক্ষা হবে। বিসিএসআইআর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা হবে পানিতে অন্য কোনো পদার্থ রয়েছে কি না। এছাড়া পানিতে যে উপাদান ও মান থাকার কথা সেগুলো রয়েছে কি না তাও পরীক্ষা হবে, যা প্রতিবেদন আকারে অবহিত করা হবে হাইকোর্টকে।
সূত্র: জাগো নিউজ