শিরোনাম
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে স্থানীয় এমপির কাছে লঞ্চ চেয়ে লাঞ্ছিত ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায়। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু।
বহিষ্কার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতার নাম গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার। তিনি বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হাচানুর রহমান রিমনের নির্দেশে তাকে লাঞ্ছিত এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ ফেরদৌস তালুকদারের।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার বিকালে বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগ এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বরগুনা-২ নির্বাচনী এলাকার পাথরঘাটা-বামনা এবং বেতাগীর দলীয় নেতাকর্মীরা।
সভায় দেওয়া বক্তব্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে এমপি রিমনের কাছে ৩ উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের জন্য কমপক্ষে ৩টি লঞ্চ দেওয়ার অনুরোধ করেন ফেরদৌস তালুকদার। নির্বাচনী এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে ২৫ জুন পদ্মা পাড়ে যেতে চায় উল্লেখ করে ৩টির কম লঞ্চ হলে তারা সবাই যেতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
ফেরদৌস তালুকদারের বক্তব্য চলার মধ্যেই তাকে থামিয়ে দেন এমপি রিমন। ২৫ জুনের প্রোগ্রামে ২টির বেশি লঞ্চ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ নিয়ে সংসদ সদস্য এবং ফেরদৌস তালুকদারের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডা হয়। পরে খবর আসে যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে গালমন্দ করার অপরাধ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার (১৭ জুন) উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদারকে তার দলীয় পদবি এবং দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি ইতোমধ্যে ফেরদৌসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২-১ দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে জেলা কমিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে ফেরদৌস তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক আনন্দ আর উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ৩টি উপজেলা থেকে কেবল দলীয় নেতাকর্মীরাই নয়, অনেক সাধারণ মানুষও চাইছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে। এদের অনেকেই আমাদের কাছে বলেছেন পদ্মাপাড়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা। শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় বিষয়টি আমি তুলে ধরি। সেখানে উপস্থিত নেতারাও একই কথা বলেন। আগ্রহী মানুষের যে চাপ তাতে ৩ উপজেলার জন্য কমপক্ষে ৩টি লঞ্চ প্রয়োজন বলে এমপিকে জানাতেই তিনি ক্ষেপে উঠেন। আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ৩ উপজেলার জন্য ২টির বেশি লঞ্চ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ নিয়ে এমপি সাহেবের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি বাগবিতণ্ডা হয়। পরে জানতে পারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমপি সাহেব কখনই আওয়ামী লীগবান্ধব ছিলেন না। দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তার কাছে বেশি প্রিয়। ভরা মজলিসে তিনি আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন। আবার তারই নির্দেশে আমাকে বহিষ্কার করেন। কার কাছে বিচার চাইব? জমি দখল, দলীয় নেতাকর্মীসহ, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি বহু নারীকে মারধর, বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ ও নারীদের ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি-ধমকি দেওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমি একজন আজন্ম আওয়ামী লীগার আর তার বাবা ছিল কুখ্যাত রাজাকার। এটা কে না জানে। উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি আজ এমপি, আর আমাকে করা হয় দল থেকে বহিষ্কার। আমার অপরাধ আমি বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তার কাছে লঞ্চ চেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোমবার বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমনের মোবাইল ফোনে ফোন দিলে পরিচয় এবং ফোন দেওয়ার কারণ শোনার পর বলেন, আমি ব্যস্ত। মন্ত্রণালয়ে জরুরি মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব। ঘণ্টাখানেক পর আবারো ফোন দেওয়া হলে তিনি আর তা ধরেননি।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, কাউকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা উপজেলা আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা জেলা আওয়ামী লীগেরও নেই। ফেরদৌস তালুকদার যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা এমপির সঙ্গে অশোভন আচরণ করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগ এই বিষয়ে সুপারিশ পাঠাবে জেলায়। আমরা তা পর্যালোচনা করে জানাব কেন্দ্রকে। তারপর কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্ত দেবে। হুট করে কাউকে বহিষ্কার বললেই সে বহিষ্কার হয়ে যায় না। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক রীতিনীতি কিংবা গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। বিষয়টি আমরা দেখছি।
প্রসঙ্গত, সালিশির নামে নারীর মাথায় মানব বিষ্ঠা ঢালা থেকে শুরু করে দফায় দফায় একাধিক নারীর গায়ে হাত তোলা, প্রকৌশলীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর এবং জমি দখলসহ নানা অভিযোগে প্রায় বছরজুড়েই সংবাদের শিরোনামে থাকেন বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন।
সূত্র: যুগান্তর