শিরোনাম
যশোর থেকে গত তিন বছরে ১ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন পটোল, বাঁধাকপি, পেঁপে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ১৪টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালে উৎপাদিত সবজি ২৫৩ ও শীতকালীন সবজি রয়েছে ১ হাজার ৭২ মেট্রিক টন।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পলাশী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সম্প্রতি গ্রীষ্মকালীন সবজি রপ্তানি-২০২২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানান। বক্তারা বলেন, যশোরে উৎপাদিত সবজি বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় কৃষক সবজির ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। একই সঙ্গে কম রাসায়নিক সার ও কীটনাশকে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষকেরা দক্ষ হয়ে উঠছেন।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সহযোগিতায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের সফল প্রকল্পের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান। বক্তব্য দেন কৃষি বিভাগের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দীপংকর দাস, অতিরিক্ত উপপরিচালক সৌমিত্র সরকার, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কমোডিটি ম্যানেজার নাজমুন নাহার, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের সফল প্রকল্পের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
কৃষিবিদ নূরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন কৃষিজমি কমছে, কিন্তু জনগণ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দিতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে।’
কৃষকদের উদ্দেশে নূরুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা হতাশ হবেন না। সবজি বিদেশে রপ্তানি হওয়াতে অবহেলিত কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া কিছুটা নিশ্চিত হয়েছে। আমরা উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশে বাজার খুঁজছি।’
অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা জানান, ২০১৮ সালে যশোরে উৎপাদিত পটোল, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, কচুর লতি, কাঁচকলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, শিম, বেগুন ও ঢ্যাঁড়স ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করা হয়েছে। ৩৩ জন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে বিশ্বের ১৪টি দেশে এই সবজি পাঠানো হয়। এ বছর যশোরে উৎপাদিত আরও এক হাজার মেট্রিক টন সবজি বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সফল প্রকল্পের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষ্যে যশোর ও নড়াইল জেলায় ২০১৬ সালে সফল প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। রপ্তানিকারকেরা যাতে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে নিরাপদ কৃষিপণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানি করতে পারেন, এ জন্য যশোর সদর ও মনিরামপুর উপজেলায় ১০টি সবজি সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে গ্রেডিং, সর্টিং ও পণ্য ধোয়ার সুবিধা আছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য প্রায় এক হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বপ্ন, আগোরা, গ্রিন বাজারের মতো সুপারশপের উদ্যোক্তারা এখন সরাসরি যশোর থেকে কৃষকের সবজি পাইকারি দরে কিনে নিচ্ছেন। ফলে এখন ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষক।
পলাশি গ্রামের পটোলচাষি রতন বিশ্বাস বলেন, ২১ শতক জমিতে পটোলের আবাদ আছে। প্রতি সপ্তাহে একবার খেত থেকে পটোল তোলা হয়। আজ (সোমবার) প্রায় ১০০ কেজি পটোল তোলা হয়েছে। ২২ টাকা কেজি দরে রপ্তানিকারকেরা কিনে নিয়েছেন। এতে সুবিধা হয়েছে খেত থেকেই সবজি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দামও ভালোই পাওয়া যায়।
সূত্র: ইত্তেফাক