শিরোনাম
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে স্বাভাবিক দিনের মতো শুরু হয়েছে মাছের কেনাবেচা। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা প্লাস্টিক ড্রাম, বাঁশের খাঁচাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মাছ নিয়ে আসছেন বাজারে। নদী-বিল-হাওরের ছোট-বড় মাছে বাজার ভরে উঠলো মুহূর্তেই। আনাগোনা শুরু হলো ক্রেতাদেরও। এ দৃশ্য নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের মেছুয়া বাজারের।
হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠল পুরো বাজার। এরই মধ্যে মোটরসাইকেলে করে বাজারে এলেন দুজন ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে একটি প্লাস্টিকের বস্তা। সেই বস্তা থেকে বের হলো বড় একটি মাছ। দেখা গেল বড় বড় আঁশে ঢাকা, সোনালী রঙের লম্বাটে দেহের মাছটি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর ঐতিহ্যবাহী মহাশোল। মুহূর্তেই সব ক্রেতার দৃষ্টি কেড়ে নিলো সাত কেজি ওজনের মাছটি। উৎসুক জনতার পাশাপাশি আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা দামাদামি করলেও কেউ মাছটির দামের নাগাল পাননি। অনেক দামাদামির পর বিশাল আকারের মহাশোল মাছটি কিনেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিসুল হক। পরে তিনি খুচড়া বিক্রির জন্য মাছটির দাম হাঁকেন প্রতি কেজি তিন হাজার টাকা।
জানা গেছে, মাছটি ধরা পড়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কমলাকান্দার পাহাড়ি একটি নদী থেকে। সোমবার রাতে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী মাছটি কিনে অধিক দামের আশায় নিয়ে এসেছেন দুর্গাপুরে। গত কয়েক বছর বাজারে এত বড় মহাশোল দেখা যায়নি বলে জানালেন ক্রেতারা।
স্থানীয়রা জানায়, পাহাড়ি ঝরনা ধারার বড় বড় পাথরের নিচে এ মাছগুলো থাকে। অনেক সময় পানির স্রোতে মাছগুলো নদীতে ভেসে আসে। এ কারণে সোমেশ্বরী নদীতে বড় আকৃতির মহাশোল পাওয়া যেত। এখন আর এত বড় মাছ চোখে পড়ে না জেলেদের। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা ছোট আকারের শোল চোখে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীতে ১১ বছর ধরে যত্রতত্র ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার প্রভাব পড়েছে মাছের অভয়াশ্রমে। অবৈধ এসব ড্রেজারের পোড়া তেল ও মবিল পানিতে মিশে মাছ ও জলজ প্রাণীর বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে। এ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে লাচু, পাবদা, নানী, মলা, ভেলা, মহাশোলের মতো সোমেশ্বরীর ঐতিহ্যবাহী সব দেশীয় মাছ।
মাছ ব্যবসায়ী আনিসুল রহমান বলেন, আগে বাজারে অনেক মহাশোল মাছ উঠতো। এখন আর দেখা যায় না। মঙ্গলবার বাজারে মোটামুটি বড় আকৃতির একটা মহাশোল উঠেছে। অনেক দরদামের পর মাছটি আমি কিনেছি। ভালো দাম পেলে খুচরাভাবে কেজি হিসেবে বিক্রি করব।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুণ্ড বলেন, সোমেশ্বরী নদীর মহাশোল মাছ নিয়ে এরই মধ্যে মৎস্য ইনস্টিটিউটে গবেষণা চলছে। আমরা বেশকিছু মাছ সংগ্রহ করে মৎস্য ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছি। এসব মাছের রেণু থেকেই পোনা উৎপাদনে আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আশা করি, এ গবেষণা সফল হলে অন্য মাছের মতোই ঐতিহ্যবাহী মহাশোল মাছও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।