শিরোনাম
সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলার সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় ও আসাম সীমান্তে ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, ধর্মপাশাস উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ফসলের জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানির কারণে ছাতক-সুনামগঞ্জ-সিলট, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ-হালুয়াঘাট-মঙ্গলকাটা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় পানি ওঠায় যান চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে সিলেট-ঢাকাগামী যাত্রীদের।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ী, মধ্যবাজার, জেলরোড, লঞ্চঘাট, নবীনগর, বড়পাড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্ট পানি প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পানিতে বিভিন্ন উপজেলার পুকুর থেকে মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছ চাষিরা।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজারসহ উপজেলার ২২০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্যচাষিরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনিল মণ্ডল জানিয়েছেন, তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৭০০ হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি এসব উপজেলায় ৪০ হেক্টর আউশ ধানের বীজ নষ্ট হয়েছে।
সদর উপজেলার সুরমা ভৈষারপার গ্রামের আছিয়া খাতুন বলেন, ঘরের চারদিকে পানি। রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। যেভাবে পানি বাড়ছে মনে হচ্ছে রাতের মধ্যেই পানি ঘরে ঢুকবে। ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো ভয়ে আছি।
মুজিবুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমার ঘরে পানি ঢুকেছে। পরিবারের সদস্যরা খাটের ওপরে রয়েছেন। বাড়ির রাস্তায় কোমর পানি। আল্লাহ ছাড়া উপায় নাই।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম, ১০ দিন হলো ঘরে কাঁচা ধান। রোদ না থাকায় শুকাতে পারছি না। ধানের মধ্যে চারা গজিয়েছে। এই ধান এখন ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌলী মো. সামছুদ্দোহা বলেন, ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: আরটিভি