শিরোনাম
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা কোনো সুযোগই দেয়নি মুহিবুল্লাহকে। পাঁচ রাউন্ড গুলি করলে তিন রাউন্ড গুলি সরাসরি তার বুকে লাগে। এতে তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, এশার নামাজের পর ক্যাম্পে নিজ অফিসে বসা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় অজ্ঞাতনামারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে তাকে এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থানকালে একটি বন্দুকধারী দল আমার ভাইয়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় মাস্টার আবদুর রহিম নামে এক সন্ত্রাসী। বন্দুকধারীদের এ দলে মাস্টার আব্দুর রহিম, মুর্শিদ, লালুসহ ২০ থেকে ২৫ জন ছিল।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমার ভাই এগিয়ে আসতেন। তাদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছিলেন। শুধু এখানে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আমার ভাইয়ের পরিচিতি ছিলও। হয়তো সেই যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে এ হামলা এবং তাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘাতকদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এর আগে, বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করা হয় এই আলোচিত রোহিঙ্গা নেতাকে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮ এপিবিএন) পুলিশ সুপার (এসপি) শিহাব কায়সার খান প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুহিবুল্লাহর লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে আনার পর ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। লাশের সাথে ছিলেন নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহ, চাচাত ভাই নুরুল আমিনসহ স্বজনরা।
মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবিরে মহাসমাবেশ করে আলোচনায় আসেন মুহিবুল্লাহ। একই বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৭ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ২৭ জন প্রতিনিধি অভিযোগ দেন মুহিবুল্লাহ ছিলেন তাদের একজন।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসাকে দায়ী করেছে স্বজনরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতোপূর্বে মুহিবুল্লাহ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে বাংলাদেশ সরকারসহ এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন এই নেতা। তার এই ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় রোহিঙ্গা ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আরসাসহ অন্যান্য গ্রুপগুলো। এর ধারাবাহিকতায় তাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এপিবিএন পুলিশ কুতুপালংসহ অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে টহল দিচ্ছে।