শিরোনাম
পুরান ঢাকার চার তলা ভবনের পাশের সংকীর্ণ খালি জায়গা দিয়ে ৪০ ফুট গভীরে পড়ে যায় এক যুবক। ‘রুদ্ধশ্বাস অভিযান’ শেষে তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। সে ঘটনা বর্ণনা দেওয়া হয় উদ্ধারকারী বাহিনীটির ফেসবুক পেজে, সঙ্গে যোগ করা হয়েছে একটি ভিডিও।
২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত পৌনে ১টার ঘটনা এটি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংবাদ আসে অজ্ঞাত এক যুবক পড়ে গেছে ৪০ ফুট গভীরে। উদ্ধারে পাঠানো হয় সূত্রাপুর রেসকিউ ইউনিট।
সিনিয়র স্টেশন অফিসার সাইফুলের নেতৃত্বে সূত্রাপুরের ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহায্য চায় ঢাকা হেড কোয়ার্টারের। ডিএডি বজলুর রশিদের নেতৃত্বে স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম সুমনসহ ৬ জনের একটি উদ্ধারকারী দল রাত সোয়া ১টার দিকে ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
ঘটনাস্থল ছিল পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ডিস্টিলারি রোডে ধূপখোলা মাঠের পশ্চিম পাশে একটি চারতলা বাড়ি। অ্যাম্বুলেন্সসহ সদর দপ্তরের রেসকিউ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারে, চার তলা ভবনের পাশে একটি ভয়েড স্পেস দিয়ে একজন যুবক নিচে পড়ে গেছেন।
উদ্ধারকারীরা ভবনের ছাদে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার সুড়ঙ্গে লাইটের আলো ফেলে অস্পষ্টভাবে দেখতে পান পড়ে থাকা যুবককে। চারটি ভবনের সংযোগস্থলে ৩ ফুট বাই ২ ফুটের অপ্রশস্ত ভয়েড স্পেসটি ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মাটির নিচে চলে যাওয়া কোনো অন্ধকার সুড়ঙ্গ বা গর্ত। নিচে পড়ে থাকা ব্যক্তির তখনো চেতনা আছে, আহত অবস্থায় একটু কাতরাচ্ছেন। উদ্ধারকারীদের প্রশ্নে সাড়া দিতে পারছিলেন তিনি।
ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে উদ্ধার কৌশল নির্ধারণ শেষে শুরু হয় অভিযান। চৌকস উদ্ধারকর্মী মুক্তারকে ব্রিদিং অ্যাপারেটাস পরিয়ে আর ফুলবডি হারনেস বেঁধে নামানো হয় অন্ধকার সুড়ঙ্গে। সঙ্গে দেওয়া হয় অতিরিক্ত আরেকটি ফুলবডি হারনেস। ওপর থেকে হারনেসের প্রান্ত ধরে রাখেন অপর উদ্ধারকর্মীরা। ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের মাঝে মুক্তার পৌঁছে যান সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে। এরপর ফায়ার ফাইটার মুক্তার সঙ্গে নেওয়া অতিরিক্ত ফুলবডি হারনেসে সুরক্ষিত করে বেঁধে ফেলে আহত ব্যক্তিকে।
অবশেষে সবার সহযোগিতায় চারতলা থেকে পড়ে যাওয়া এবং সুড়ঙ্গের নিচে আটকে থাকা ‘সালমান’ নামের ২৪ বছরের সেই যুবককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালমান কীভাবে সেখানে পড়লেন, কেন সেখানে এসেছিলেন, পড়ার পর তার অবস্থা কী হয়েছিল, বা কেমন অনুভব করেছেন, মৃত্যু ভয় তাকে তাড়িত করেছে কিনা— এ সব তথ্য শোনার চেয়ে জীবন রক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানোকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন উদ্ধারকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে সালমানকে পৌঁছে দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
অভিযান সম্পন্ন করে রাত ২টা ২০ মিনিটে কর্মস্থলে ফিরে আসেন উদ্ধারকারীরা। তাদের অভিনন্দন জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন এবং পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান।
রবিবার রাতে জানা যায়, সালমানের কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সূত্র: দেশ রূপান্তর