শিরোনাম
নগরীর ফিরিঙ্গি বাজারে বন বিভাগকে ৯৩ বছর আগে লিজ দেওয়া প্রায় এক একর জমি ফেরত নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এরই মধ্যে লিজ বাতিলের চিঠি দেওয়া হয়েছে বন বিভাগকে। এখানে জব্দকৃত কাঠের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়, যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। লিজ বাতিল হওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছে বন বিভাগ। জব্দ করা কাঠের নিলাম বন্ধ হওয়ার পথে।
বন বিভাগের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বন বিশ্রামাগারের সামনের জায়গাটিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে বিভিন্ন মহলের। ১৯২৯ সাল থেকে প্রায় ৯৩ বছর ধরে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ভূমিতে একটি বড় শিল্প গ্রুপ ট্রাক স্ট্যান্ড করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মূলত ওই শিল্প গ্রুপকে সুবিধা দিতেই জমিটির লিজ বাতিল করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের লাইটারেজ জেটিলাগোয়া জমিতে ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। তাই এর লিজ বাতিল করা হয়েছে। লাইটারেজ জেটি দিয়ে বর্তমানে প্রচুর পণ্য খালাস হচ্ছে। এ জন্য ব্যাকআপ ইয়ার্ডের প্রয়োজন। তাই বন্দর নিজের প্রয়োজনে তার জমি ফেরত নিচ্ছে।
বন বিভাগের ফিরিঙ্গি বাজার কাঠের ডিপো অফিসার দেবব্রত বণিক জানান, ১৯২৯ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১.৬৬ একর জমি লিজ নেয় বন বিভাগ। এরপর এখানে সরকারি কাঠের ডিপো, বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। বিশ্রামাগারটি বন বিভাগের ঐতিহ্যের অংশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, কিংবা সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে এলে এই বিশ্রামাগারে রাতযাপন করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি বড় শিল্প গ্রুপ এখানে ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণের চেষ্টা করছে। এ জন্য বন্দর লিজ বাতিল করছে। তারা ১.২৬ একর জমির লিজ বাতিলের চিঠি দিয়েছে।
এক মাসের মধ্যে ওই জমি বন্দরকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এভাবে হুট করে লিজ বাতিল করায় বন বিভাগের স্থাপনাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্রামাগারের সামনে ট্রাক স্ট্যান্ড হলে বন বিশ্রামাগার এবং এর সংলগ্ন স্টাফ কোয়ার্টার, স্টাফ ব্যারাকসহ অন্যান্য সব স্থাপনা পরিত্যক্ত বা ব্যবহার অনুপোযোগী বা বাসঅযোগ্য হয়ে যাবে। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাবে জব্দকৃত কাঠ বিক্রি, যা এখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছিল। ইজারা বাতিল করে ১৩ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগকে দেওয়া চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি এনে রাখা এবং নিলামে বিক্রি করতে বন বিভাগকে ১.৬৬ একর জমি অস্থায়ী ইজারা (একসনা) দেওয়া হয়েছিল।
এই জমির পেছনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি নির্মাণ করায় নদীপথে কাঠ বা বাঁশ আনা আর সম্ভব নয়। তাই বরাদ্দকৃত জায়গা তার উপযোগিতা হারিয়েছে। বর্তমানে জেটিতে কার্গো হ্যান্ডলিং শুরু হয়েছে। হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাওয়ায় জেটির জন্য জায়গা প্রয়োজন। তাই ইজারাকৃত ১.৬৬ একরের মধ্যে ১.২৬ একর জমির ইজারা বহাল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজের প্রয়োজনে লিজ দেওয়া জমি ফেরত নিচ্ছে। তবে জমির একাংশে বন বিভাগের রেস্ট হাউজসহ যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলো থেকে যাবে। কারণ ওই অংশটির লিজ বাতিল হচ্ছে না।
সূত্র: যুগান্তর