শিরোনাম
বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় দেশের সব সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন তিন হাজার পর্যটক। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকদের আরও একদিন দ্বীপে অবস্থান করতে হবে।
এদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়েছে। এজন্য জাহাজ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা এড়াতে দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের সৈকতে নামতে নিষেধ করে মাইকিং করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সমুদ্র উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী কোনও জাহাজ সেন্টমার্টিনে যেতে দেওয়া হয়নি। যেসব পর্যটক টিকিট কেটেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বীপে অবস্থানকারী পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সৈকতে পর্যটকদের নামতে নিষেধ করা হয়েছে।’
জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার-টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন নয়টি জাহাজে চার-পাঁচ হাজারের অধিক পর্যটক সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যান। সাতটি জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, একটি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এবং আরেকটি চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল করে।
ঢাকার ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে দ্বীপে ঘুরতে এসে আটকা পড়েছি। আমার মতো অনেকেই আটকা পড়েছেন। সমুদ্র উত্তাল থাকায় আজ কোনও জাহাজ সেন্টমার্টিনে আসেনি। ফলে আমাদের আরও একদিন এখানে থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের ট্রাফিক সুপারভাইজার জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দ্বীপে বেড়াতে আসা তিন হাজার পর্যটক ফিরতে পারেননি। এই নৌপথে টেকনাফ থেকে নয়টি জাহাজ চলাচল করে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’
জানতে চাইলে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, ‘সমুদ্র উত্তাল থাকায় কোনও জাহাজ সেন্টমার্টিনে যায়নি। দ্বীপে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’
দ্বীপে অবস্থানকারী স্থানীয় সাংবাদিক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপে তিন হাজারের বেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন। আজ দ্বীপেই অবস্থান করতে হবে তাদের। তারা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে নিরাপদে আছেন। তবে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ আর্থিক সংকটে পড়েছেন।’
দ্বীপের নীলদিগন্ত হোটেলের ম্যানেজার সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমার হোটেলে শতাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। গত দুই দিনে বেড়াতে এসেছেন তারা। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারা আটকা পড়েছেন। জাহাজ চলাচল শুরু হলে তারা ফিরে যাবেন।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে বেড়াতে এসে হাজারো পর্যটক আটকা পড়েছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি, পর্যটকদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়। পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ায় কোনও পর্যটক যেন সমুদ্রে গোসল করতে না নামেন। এ বিষয়ে পর্যটকদের সতর্ক করেছেন বিচকর্মীরা।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন