শিরোনাম
বাগেরহাটের বাসিন্দা নাসির হোসেন (৫০)। দেশে ২০ বছর চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও রয়েছে। দেশে চোর হিসেবে পরিচিত হয়ে যাওয়া একপর্যায়ে সাত বছর আগে নাসির ফ্রান্সে চলে যান। প্রবাসে বসেই গড়ে তোলেন চোরচক্র। প্রবাসী নাসিরের পরিকল্পনায় এ চক্রের মূল টার্গেট ছিল রাজধানীসহ দেশের বড় বড় জুয়েলার্স।
সর্বশেষ রাজধানীর ভাষানটেকের পুরাতন কচুক্ষেতে রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকান দুটি থেকে প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ টাকা চুরি করে চক্রটি। এ চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঞ্জুরুল হাসান শামীম (৩৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
পুলিশের দাবি—রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে চুরির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড এ মঞ্জুরুল। ফ্রান্সে বসে নাসিরের করা পরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যদের নিয়ে জুয়েলার্সে চুরি করেন মঞ্জুরুল।
মঞ্জুরুল হাসান শামীমকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ও কিছু ইমিটেশনের গহনা উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, বাগেরহাটের নাসির দেশে থাকতে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাত বছর আগে তিনি ফ্রান্সে যান। সেখানে বসে দেশের জুয়েলার্সের দোকানে চুরির পরিকল্পনা করতেন তিনি। তার পরিকল্পনায় দেশে থাকা চোরচক্রের সদস্যরা চুরি করতো। নাসিরের পরিকল্পনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ভাষানটেক থানাধীন পুরাতন কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে একটি সংঘবব্ধ চোরচক্র প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতার মঞ্জুরুল হাসান শামীম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, চক্রের দুজন সদস্য মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ওই মার্কেটে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেন। চাকরিরত অবস্থায় তারা দোকানে চুরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য চক্রের অন্য সদস্যের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকেন। পরিকল্পনামাফিক ঘটনার আগের দিন চক্রের অন্য এক সদস্য শাহীন মাস্টার নামে একজন ওই মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার নাম করে বক্স বিশিষ্ট টেবিল ব্যবহার করে কৌশলে তালা ভাঙর সরঞ্জামাদি মার্কেটে প্রবেশ করান।
ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১টার দিকে চক্রের আরও দুই সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙার মিস্ত্রি রাজা মিয়া মার্কেটে প্রবেশ করে মাসুদ ও ইলিয়াসসহ চুরি করে ভোর ৫টার দিকে মার্কেট থেকে বের হয়। এরপর তাদের ভাড়া করা কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার বাসায় যায়। সেখানে শাহীন মাস্টার ও গ্রেফতার মঞ্জুরুল হাসান শামীম আগে থেকেই চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভাড়া বাসায় চোরচক্রের সব সদস্যের উপস্থিতিতে স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ আলাদা করা হয়।
পরদিন আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে শ্রীকান্ত চোরাই স্বর্ণ তার পূর্ব পরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবারও ভাড়া বাসায় ফেলেন। এরপর চোরাই স্বর্ণ বিক্রির টাকা, ইমিটেশন গহনা ও চোরাই নগদ অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে দ্রুত ওই বাসা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
রজনীগন্ধা মার্কেটে যে প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপার নিয়োগ দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটি জনবল নিয়োগের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেনি। এ দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে চক্রের সদস্যরা চুরি করেছে।’
বিদেশে থাকা নাসিরের বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘নাসির পেশাদার চোর। সাত বছর আগে তিনি ফ্রান্সে চলে যান। এরপর প্রবাসে একটি চোরচক্রের মূলহোতা ও অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। নাসির ২০ বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
পুলিশ জানিয়েছে, ফ্রান্সে থাকা নাসির গ্রেফতার শামীমের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক অর্থের যোগান দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে এবং তারা সে অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এরআগে তারা ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশ এলাকায় একাধিক চুরি করেছে বলে জানা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মানস কুমার পোদ্দার, মিরপুর জোনাল টিমের টিম লিডার মো. সাইফুল ইসলাম, ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ ও সহকারী কমিশনার আবু তালেব প্রমুখ।
সূত্র: জাগো নিউজ