শিরোনাম
শুরুটা ফেসবুকে। পরবর্তীতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, এক পর্যায়ে বিয়ে। এখন আবার অনাগত সন্তানকে পিতৃ-পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে নারাজ। একইসঙ্গে দ্বিতীয় স্ত্রী সেই নারীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের সাপ্লাই শাখার এআইজি (এসপি পদমর্যাদা) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে এআইজি মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে পরিচয় ওই নারীর। পরবর্তীতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। চলতি বছরের ৬ জুন বিয়ে করেন তারা। ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ করেন, ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতেই এআইজি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাকে বিয়ে করেন। বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তানের দায় নিতে নারাজ এআইজি মহিউদ্দিন ফারুকী। তবে ওই নারী স্ত্রীর মর্যাদা এবং অনাগত সন্তানের পিতৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য অভিযোগ করেছেন।
গত ২৫ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ দায়েরের পর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবরও একটি অভিযোগ করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিষয়টি আমলে নিয়ে ভুক্তভোগী সেই নারীর অভিযোগের সত্যতা ও বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য উদঘাটন করার কথা বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী সেই নারী বলেন, আমি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এআইজি (এসপি পদমর্যাদা) ফারুকী আমার বাচ্চাকে স্বীকার করতে চাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত আমাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করছে। এসব কারণে মানসিকভাবে আমি ভীতসন্ত্রস্ত। প্রথম স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নেওয়ার জন্য আমাকে বাধ্য করে ফারুকী। আমাদের ফেসবুকে পরিচয়, পরবর্তীতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আমি আমার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দেই। পরে গত ৬ জুন ফারুকীকে বিয়ে করি। এরপর থেকেই শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়ে আসছি। বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছিল কিনা এ বিষয়টিও আমাকে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ফারুকী । আমার অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য দরকার হলে আইনের আশ্রয় নেবো। আমি বিশ্বাস করি পুলিশ সদর দফতর এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
ভুক্তভোগী সেই নারী আরও অভিযোগ করেন, আমি ফারুকীর স্ত্রী। আমার গর্ভে ফারুকীরই বাচ্চা। ২০২০ সালের মার্চে তাকে যখন গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানাই, তখন সে ভ্রূণহত্যা করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে মার্চের দিকে আবারও গর্ভধারণ করলে আবারও ভ্রূণহত্যার চেষ্টা করেন ফারুকী। পরবর্তীতে ফারুকী আমাকে চলতি বছরের ৬ জুন বিয়ে করেন। ফারুকী জানিয়েছিলেন, প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। পরবর্তীতে জানতে পারি মিথ্যা বলেছেন। ধর্ষণ মামলায় যেন পড়তে না হয় সে কারণেই আমাকে বিয়ে করে ফারুকী।
এসব অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সাপ্লাই শাখার এআইজি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী কাছে ওই নারীকে বিয়ে করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে ওই বিয়ের কোনও আইনগত ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন তিনি। ফারুকী বলেন, বিয়ের সময় আগের স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স কার্যকর হয়নি। সে কারণে বর্তমান বিষয়টির কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। এছাড়া ভুক্তভোগী নারীর দাবি করা সন্তানের বাবা তিনি নন বলেও দাবি করেন। এআইজি ফারুকী বলেন, সে আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিল।
কোন পরিস্থিতিতে ওই নারীকে বিয়ে করতে হয়েছে এবং বিয়ের বিষয়ে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আইজিপি কমপ্লেইন সেলে আসা প্রতিটি কমপ্লেইন গুরুত্বসহ তদন্ত করা হয়। তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
পুলিশ সদস্যদের এমন আচরণের বিষয়ে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, অভিযোগ যে কারও বিরুদ্ধে আসতে পারে। তবে এ ধরনের অভিযোগ আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আরও স্বচ্ছতা বাড়বে। তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি তুলে আনার পাশাপাশি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।