শিরোনাম
রূপপুর বালিশকাণ্ডকে হার মানিয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ সায়েরা খাতুন হাসাপাতালের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নে রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইটের দাম ধরেছে ৩ হাজার ৮৪৩ টাকা। যার বাজারদর ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা। ১৮ ওয়াট এলইডি সারফেস ডাউন লাইট ৩ হাজার ৭৫১ টাকা। যার বাজারদর সর্বোচ্চ ৭০০-৮০০ টাকা। এলইডি ওয়াল স্পট লাইট ১ হাজার ৫৫৬ টাকা।যার বাজারদর ৩০০-৪০০ টাকা। এমন ২৪ ধরণের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এনিয়ে একটি টেলিভিশনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর তোলপাড় চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পিডাব্লিউডির তালিকাভুক্ত না হলেও রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের চাপে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ঠরা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের দাম 'বিডি থাই কসমো লিমিটেড'( কসমো লাইটিং) থেকে অনেক কম। বিডি থাই কসমো লিমিটেড' ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইটের ৩হাজার ৮৪৩ টাকার যে দাম ধরেছে দরপত্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৭১৫ টাকা করে দিতে চাইলেও সেটি নেয়নি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
গণপুর্ত অধিদফতরে খোজ নিয়ে জানা যায়, এসব সরঞ্জাম সরবরাহের তালিকাভুক্ত নয় বিডি থাই কসমো লিমিটেড। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করলেও প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। গণপুর্ত অধিদফতরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হকে গণমাধ্যমকে বলেন, টিউব আর বাতি। বাকি কিছু এনলিস্টেড হয়নি। প্রসেসে আছে। উনারা আবেদন করেছেন। লাইট ফিটিং,ব্রাকেট লাইট,টিউব ফিটিং এইগুলা।এগুলো সহসা হবে না। আমরা করবো না। চলে গেছে অর্থ মন্ত্রনালয়ে।
মূলত: বিডি থাই কসমো লিমিটেডকে এই কাজ দিয়েছে মুল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানা ,স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সিলেকশনেই হয়েছে সব। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের (এজিএম তড়িত) আবদুন নাঈম সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, ,স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে যোগাযোগ করেন সবকিছু জানতে পারবেন।ওনারা যা করবে,যা দিবে,যা সিলেক্ট করবে আমরা তাই দিতে বাধ্য। তবে বিডি থাই কসমো লিমিটেডকে কাজ দিতে সুপারিশের কথা অস্বীকার করেন তড়িত প্রকৌশলী মো.আবদুল হামিদ। তিনি বলেন,আমরা কোন সিলেকশন দেইনি।আমরা কোয়ালিটি বলবো। এই জিনিস লাগান ওনারা কোথা থেকে আউটসোর্স করবে সেটা ওনাদের ব্যাপার।আমরা বলছি শিডিউলে যেটা আছে এভাবে দিতে হবে। বিডি থাই কসমো লিমিটেডের মালিক রায়ান হামিদ বলেন, প্রস্তাবিত দামের ওপর পরে ডিসকাউন্ট করে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত যে, কেনাকাটার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। নির্মাণাধীন দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মিত গ্রিনসিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয় ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এরমধ্যে এর দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির নতুন নজির স্থাপন করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের জন্য ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় হরিলুটের অভিযোগ ওঠে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির অব্যবহৃত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) জন্য একটি পর্দা কেনা হয় প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে। বর্তমানে যার বাজার মূল্য হবে ২০ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকার ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন কেনা হয় ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। এভাবে প্রায় ১৮৬ গুণ পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্স।