শিরোনাম
দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজবে মহালয়ায়। আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়া। এর সঙ্গে সঙ্গেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী এবার আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং বিদায় নিবেন দোলায় চড়ে। মহালয়ার পাঁচদিন পর ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পালিত হবে। আর ১৫ অক্টোবর হবে দেবী বিসর্জন। উৎসবকে ঘিরে তাই এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন– বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন— দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
ধূপ, কাশা, ঘণ্টা আর ঢাকের তালে তালে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। তাই শেষ সময়ে চলছে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ। সারা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরান ঢাকার শাখারিবাজারে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন সম্প্রদায়ের পালেরা (প্রতিমা তৈরীর মূল কারিগর)। সেখানের কয়েকটি পালবাড়ি ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাবা-দাদার আমল থেকে। প্রতিবছর তারাই মূলত প্রতিমাগুলো তৈরি করেন। কারিগরদের সঙ্গে পরিবারের বাকি সদস্যরাও তখন যুক্ত হন। প্রথমে কাঠ-বাঁশ দিয়ে ফ্রেম তৈরি করে খড় দিয়ে মূর্তির আদল তৈরি করা হয়। তার ওপর দেওয়া হয় কাদা-মাটির প্রলেপ। এভাবে একের পর এক প্রলেপ লাগিয়ে শুকাতে হয়। সব শেষে রং লাগিয়ে পোশাক ও গহনা পরানো হয়। কারিগরেরা বলছেন, প্রতিমা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ।
কারিগরার জানান, প্রতিমা তৈরির খরচ প্রতিবছরই বাড়ছে। বর্তমানে আকারভেদে একেকটি প্রতিমা তৈরি করতে ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কোনও কোনও মণ্ডপে লাখ টাকার বেশিও খরচ করেও প্রতিমা তৈরি করা হয়। কাজভেদে একেকজন কারিগর মৌসুমের প্রতি মাসে আয় করেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তারা আরও জানান, কোনও কোনও মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে মাটির কাজও শেষ হয়েছে। ১০-১২ দিন পর থেকেই শুরু হবে প্রলেপ ও রং দেওয়ার কাজ। সব কাজ শেষ হবে পূজা শুরুর দুই একদিন আগে।
স্কুল জীবন থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন হরিপদ পাল। তার প্রতিষ্ঠান শিমুলিয়া ভাস্কর শিল্পালয়। বয়সের ভারে কাজ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন বর্তমানে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণেও কাজ আসার পরিমাণ কম বলেও জানান তিন। বর্তমানে একটি দেবীর প্রতিমা তৈরি করছেন। সেটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পূজা মণ্ডপের জন্য বলে জানান তিনি। হরিপদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যদি হাতের কাজ তৈরি করার পর পারি সম্ভব হয় তাহলে আরও দুই একটা কাজ নেব। কিন্তু এখন আর নিচ্ছি না। করোনার আগেও অনেক প্রতিমা তৈরির কাজ করেছি। কিন্তু এখন বয়সের কারণে আর আগের মতো কাজ করতে পারি না।
হরিপদ জানান, ঢাকার বনানী পূজামণ্ডপসহ সারাদেশেই অনেক প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন। চিকনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আর সেখানে কাজ করা হয় না। দেশের বাইরে থেকেও আগে প্রতিমা তৈরির করার জন্য বায়না করা হতো, তবে সেটি এখন হয়না বলে জানান তিনি। ওয়াশিংটনসহ ভারতেও বায়নার কাজ করেছেন হরিপদ পাল। তিনি জানান, প্রতিমার কাজ অনেক আছে। কিন্তু করতে পারছি না বলে ফিরিয়ে দিচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জের সুকৃতি শিল্পালয়ের প্রতিমাশিল্পী সুকুমার পাল এবার তৈরি করছেন বনানী পূজামণ্ডপের প্রতিমা। তিনি জানান, এবার চার-পাঁচটি কাজ পেয়েছি। অর্ডার কম কিন্তু যেসব আছে তাতে কাজ অনেক বেশি। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে চারটি প্রতিমা তৈরির কাজ আছে। আর বনানীতে একটি প্রতিমা তৈরির কাজ আছে।
প্রতিমা অঙ্গরাজ ভাস্কর শিল্পালয়ের প্রতিমাশিল্পী এস কে নন্দী জানান, আমাদের কাজ পুরদমে চলছে। আমার এখানে সাতটি প্রতিমার অর্ডার আছে। ঢাকার গোপীবাগে ভোলা নন্দগিরি আশ্রমের দুটি প্রতিমার কাজ চলছে আর সিলেটের পাঁচটি প্রতিমার কাজ করছি। গত বছরের চেয়ে এই বছর কাজ একটু বেশি। তারপরও অনেকে আমার কাছে আসছিল, কিন্তু আমার সক্ষমতা আর নেই। যার কারণে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আগামিবার যদি পরিস্থিতি ভালো হয় তাহলে আরও আগে থেকে শুরু করবো কাজ।
এদিকে সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে ১৮ দফা প্রস্তাবনা সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হবে। এর মধ্যে গতবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত করা কয়েকটি শর্ত শিথিলের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গতবার ৩৬ দফা প্রস্তাবনা ছিল এবার কমিয়ে ১৮ দফা দিয়েছি আমরা। উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় যেগুলো গতবার ছিল না, সেগুলো এবার থাকবে। পাশপাশি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হবে। মাস্ক ছাড়া এবারও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না মণ্ডপে। এবারও আলোকসজ্জা, ডিজে এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় যে শোভাযাত্রা করা হয় সেগুলো করা যাবে না। যার যার প্রতিমা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিকটস্থ স্থানে বিসর্জন দিবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু যেহেতু মোটামুটি খোলা সেহেতু আশা করছি অনেক মানুষ এবার পূজায় অংশ নিবে। যদিও আমরা রেস্ট্রিকশন দিয়ে রেখেছি। ৩০ তারিখের বৈঠকে কিছু জিনিস শিথিলতার বিষয়ে আমরা বলবো। প্রশাসন যেন তাতে নজরদারি রাখে সেগুলো আমরা বলবো।