শিরোনাম
কোটি টাকার লক্ষ্য নিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন তাঁরা। টাকা কম হলে মন খারাপ করেন। ছিনতাই করে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে কেউ কেনেন জমি, কেউ করেছেন মাছের ঘের, আবার কেউ এ টাকা দিয়ে গ্রামে গড়েছেন গরুর খামার। সূত্র: প্রথম আলো
পুলিশ বলছে, ১২ সদস্যের এই চক্র মূলত সপ্তাহে এক দিন, প্রতি শনিবার রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করতে নামে। তাদের লক্ষ্যবস্তু থাকে বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানের (মানি এক্সচেঞ্জ) লোকজন ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শুক্রবার বন্ধ থাকে। শনিবার অপেক্ষাকৃত যানজট কম থাকে, তাই এ দিনকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নিয়েছে, যাতে সহজে পালিয়ে যাওয়া যায়।
সম্প্রতি রাজধানীর মৌচাক-মগবাজার উড়ালসড়কের ওপর ৬০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ এই চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
চক্রের প্রধান জলিল মোল্লাসহ তিনজনকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ছিনতাই চক্রের সদস্য জলিল মোল্লা, রিয়াজ ও দীপুকে ঢাকা, সাভার ও যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি রিভলবার, ৫০টি গুলি, ২টি মোটরসাইকেল ও লুট করা ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। চক্রের প্রধান জলিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চারটি এবং বাকি দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, এই চক্র গত ২৮ আগস্ট শনিবার বেলা দেড়টার দিকে মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর মুন্সি শিমুল হাসান নামের এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর গাড়ির গতিরোধ করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই করে। তারা একটি মাইক্রোবাস ও তিনটি মোটরসাইকেলে করে ওই ব্যবসায়ীকে মতিঝিল থেকে অনুসরণ করেছিল। এর পরের শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) মতিঝিল থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে গিয়ে গতিরোধ করে এই দুর্বৃত্তরা। তারা ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করে টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজন বলেছেন, তাঁরা গত চার বছরে অন্তত ১৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। জলিল মোল্লা বছর চারেক আগে ১২ সদস্যের এই ছিনতাইকারী দল গঠন করেন। ১২ লাখ টাকায় দুটি বিদেশি রিভলবার কিনেছেন যশোর থেকে। জলিল মোল্লা ডিবিকে জানান, তাঁরা গত বছর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৮০ লাখ টাকা ছিনতাই করেছিলেন। ওই ঘটনায় তাঁদের চারজন এখনো কারাগারে।
ডিবির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, জলিল মোল্লার বাড়ি বরিশালে। তাঁর দলের অধিকাংশ সদস্যের বাড়ি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়। দলে কাউকে নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে মাজারে নিয়ে শপথ করান জলিল। শপথ হলো, ধরা পড়লে যাতে অন্য সদস্যদের নাম না বলেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ছিনতাইয়ের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের আগে চক্রের সদস্যরা ক্রেতা সেজে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন টাকা কেমন আছে। যেমন সেখানে গিয়ে জানতে চান ২০ হাজার ইউরো বা ডলার আছে কি না। যদি বুঝতে পারেন মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে, চক্রের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশপাশে অবস্থান নেন। কোনো গ্রাহক সেখানে ঢুকলে তাঁর ওপর দৃষ্টি রাখেন তাঁরা। কেউ ব্যাগে টাকা নিয়ে বেরিয়ে এলে তাঁকে অনুসরণ করেন। কেউ গাড়িতে, কেউ মোটরসাইকেলে থাকেন। তুলনামূলক ফাঁকা এবং সিসিটিভি নেই এমন জায়গায় ওই ব্যক্তির গতিরোধ করেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে মুহূর্তে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। কোনো কারণে মানুষ জড়ো হয়ে গেলে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তাঁরা।
ছিনতাই করা টাকার ভাগ করার সময় জলিল মোল্লা অস্ত্র ও গাড়ির জন্য অতিরিক্ত দুই ভাগ পান। জলিল ইতিমধ্যে নিজ এলাকায় ১১ শতাংশ জমি কিনেছেন এবং মাছের একটি বড় ঘের করেছেন। দলের এক সদস্য (পলাতক) এলাকায় একটি গরুর খামার করেছেন। সেই খামারে ৭০ থেকে ৮০টি গরুও রয়েছে বলে জানতে পেরেছে ডিবি।