শিরোনাম
সড়কপথে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের বেশির ভাগই চলাচল করেন এ সেতু দিয়ে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু। তবে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বাবুবাজার সেতু হিসেবে পরিচিত এই সেতুতে চলাচলকারী হাজারো যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেতু পার হতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় বলে অভিযোগ চলাচলকারীদের। সূত্র: আজকের পত্রিকা
স্থানীয় বাসিন্দা ও সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটির দুই পাশে সিঁড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহন লোকজন ওঠানামা করায়। এতে প্রকট হয় যানজট। তা ছাড়া সেতুর গোড়ায় নয়াবাজার অংশে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড রয়েছে। সেতুটি টোলমুক্ত হওয়ায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্য অনেক যানবাহন প্রতিদিন এখান দিয়ে পার হয়। এ রকম নানা কারণে সেতুটিতে যানজট সৃষ্টি হলেও তা দূর করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি ক্রমশ বাড়ছে।
নয়াবাজার থেকে কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর পর্যন্ত রাস্তায় লেগুনা চালান হজরত আলী। আলী বলেন, ‘সেতু পার হতে প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা সময় চলে যায়। সেতুর দুই প্রান্তে ট্রাক ও বাস সাইড পরিবর্তন করছে। এতে সহযোগিতা করছে স্বয়ং পুলিশ। যে কারণে বাড়ছে যানজট। লকডাউন ওঠার পর এ সমস্যা আরও বেড়েছে।’
কেরানীগঞ্জের আগানগরের বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, তিনি গুলশানে একটি অফিসে চাকরি করেন। মোটরসাইকেলে যাওয়ার পরও প্রতিদিনই তাঁর অফিসে পৌঁছতে দেরি হয়।
ঢাকা-দোহার রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের চালক ইমরান জানান, ‘বেলা একটু বাড়লেই সমস্যার শেষ নাই। সেতু পার হতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আগে দিনে চারবার যাতায়াত করতে পারলেও এখন দুবার করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এতে আমার আয়ও কমে গেছে।’
পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও নয়াবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নির্মাণের পর শুরুর দিকে সেটির ওপর কোনো বিভাজন ছিল না। তবে জনগণের অবাধ ও সহজ যাতায়াতের জন্য সেতুর উভয় পাড়ে পরবর্তী সময়ে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে সমস্যা আরও বেড়েছে। কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার, শরীয়তপুর কিংবা দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগত লোকজন সেতুর ওপর সিঁড়িতেই নেমে পড়েন। তখন সিঁড়ির পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, বাস ও রিকশাভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এতে সেতুর ওপর তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেতু কর্তৃপক্ষ বাবুবাজার অংশের সিঁড়ি কয়েক দফা বন্ধ করে দিলেও তা বারবারই ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
১৯৮৯ সালে নির্মাণ করা হয় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু। আর দ্বিতীয় সেতু চালু হয় ২০০১ সালে। কিন্তু প্রথম সেতু টোলমুক্ত করার ঘোষণা এত বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। সেতুটি টোলমুক্ত করতে গিয়ে কয়েক দফায় আন্দোলন করেন স্থানীয়রা। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সেতুটিকে ২০১৩ সালে টোলমুক্ত করা হয়। ফলে এই সেতু দিয়েই বেশি পরিমাণ যানবাহন পার হয়।
বাবুবাজার-আরমানিটোলা সমাজ কল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু এখন একটা ভোগান্তির নাম। সেতুর গোড়ায় নয়াবাজার এবং তাঁতীবাজার অংশে বড় বড় যানবাহন দিক পরিবর্তন করছে। এতে যানবাহনের গতি থেমে যাচ্ছে।’
সেতুর ওপর যানজট সমস্যা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান জাকির। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিকের লালবাগ বিভাগের ডিসি মেহেদী হাসান বলেন, সেতুর ওপর যানজটের জন্য পুলিশকে এককভাবে দোষারোপ করা হয়। সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া পার্ক, ফুলবাড়িয়া, চানখাঁরপুল, পলাশী, আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট কেটে রাখা হয়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যানজট নিরসন করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।