শিরোনাম
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন করে ফায়ার ম্যানের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াসহ বেশ কয়েক দফা কারাভোগ করেন স্বামী। তবে ভবিষ্যতে স্ত্রীকে আর নির্যাতন করবেন না বলে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে অঙ্গীকার করলে আদালত স্ত্রীর নামে একটু জমি লিখে দিতে বলেন স্বামীকে। আগামী এক মাসের মধ্যে স্বামী যদি আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করেন, তবে তার বরখাস্ত হওয়া চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
যৌতুকের অভিযোগ করা এক মামলার এদিন আপিল বিভাগে স্বামী-স্ত্রী দুজনই হাজির হয়ে স্ব স্ব বক্তব্য পেশ করেন।
আপিল শুনানিতে আদালত বলেন, আপস মিমাংসার কথা বলছেন, কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না, তার কী গ্যারান্টি আছে?
জবাবে বিবাদী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না।
পরে শর্ত দিয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হয়।
এদিন আদালতে স্বামীর পক্ষে শুনানি ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কে বি রুমী। স্ত্রীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শিরিন আফরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, অর্থ দাবি করে নির্যাতন করায় ফায়ার ম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগে মামলা করেন স্ত্রী। পরবর্তীতে রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ওই স্বামীকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘সমঝোতার আবেদন’ করেন। এনিয়ে শুনানির আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবারও ঝগড়া ও মারামারি হয় বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান। একপর্যায়ে নির্যাতনের শিকার স্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে তার ওপর নির্যাতনের কথা আদালতকে বর্ণনা করেন।
তবে মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি মুলতবি হলে বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত দিনে আবার ওই দম্পতি আপিল বিভাগে হাজির হন।
এসময় শুনানিতে আদালত স্বামীকে বলেন, আপস মিমাংসার কথা বলছেন, কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না, তার কী গ্যারান্টি আছে?
জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না।
এপর্যায়ে আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী কোনো কাজ না করলেও অন্তত আমার সঙ্গে ভালো আচরণটা করুক। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ওরকম আচরণ করবেন না, তাই সন্তানের কথা চিন্তা করে এ (আপসের) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।
এসময় আদালত ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, এ মামলা যদি খারিজ বা নিষ্পত্তি হয়ে যায় আর তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে, তখন তিনি কী করবেন?
জবাবে ওই স্ত্রী বলেন, সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। আমি আমার ছেলের বাবাকে নিয়েই থাকতে চাই, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিতা এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চান বা ওকালতি করতে চান, তা করতে দিবেন তো? ‘জ্বি, দেবো’- আদালতকে বলেন স্বামী। এসময় আদালত বলেন, ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই, আপনাদের সংসারটা টিকুক। আপনারা দুজন দুজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন আজ আদালতে বলছেন, এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই, আগামীতে যেন কোনো হাতেই আর তালি না বাজে।
সবশেষ সর্বোচ্চ আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনি একটু জায়গা আপনার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে আসুন। আগামী এক মাসের মধ্যে যদি জমিটা দিয়ে আসেন, আমরা আপনার চাকরি ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলে দিবো।
এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ঠিক করেন।