শিরোনাম
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে নতুন ভেন্যুতে বসেছে বাণিজ্য মেলা। রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (ডিআইটিএফ) এখনও প্রাণ আসেনি। ব্যবসায়ীরা কিছুটা সন্দিহান হলেও শেষ পর্যন্ত মেলা জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন।
নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার হাতছানি নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২২ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের ২৬তম বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করেন তিনি। বিদেশে করোনার দাপটে এ বছর মেলায় স্টল কিছুটা কমেছে। এবারের মেলায় ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি স্টল থাকবে। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, তুর্কিসহ আশপাশের দেশগুলো থেকে আসবে ব্যবসায়ীরা। আর সবমিলিয়ে থাকছে প্রায় ২২৫টি স্টল।
দূরত্বের কারণে মেলার শুরু থেকে দর্শনার্থী কম হতে পারে মনে করছেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে সময় গেলে মেলা জমে উঠবে বলে ধারণা তাদের। তারা বলছেন, শেরে বাংলা নগরের মতো প্রথম থেকেই মেলায় উপচে পড়া ভিড় নেই। তবে এখানে রূপগঞ্জ ও আশাপাশের আলাদা একটা দর্শনার্থী শ্রেণি তারা আসছেন। ধীরে ধীরে মেলা জমে উঠবে।
রাজধানীর তীব্র যানজটের মধ্যে বাণিজ্যমেলা শুরু হলে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হতো শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, মিরপুরসহ আশাপাশের বাসিন্দাদের। ব্যস্ততম এই এই এলাকা থেকে বাণিজ্য মেলা স্থানান্তরের দাবি ছিল দীর্ঘদিন। রাজধানী থেকে কিছুটা দূরে, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে এবার মেলা আয়োজনে স্বস্তিতে ভুক্তভোগীরা। তবে নতুন ভেন্যুতে মেলা জমে ওঠা নিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে আয়োজকরাও বলেন, প্রথমবার নতুন ভেন্যুতে মেলা, কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে তা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের বক্তাদের কথার সূত্র ধরে বলেন, একটা স্থায়ী মেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। (নতুন ভেন্যুতে) প্রথম আয়োজন করছেন, কিছু কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমি তো কাঠামো করে দিয়েছি, বাকিগুলো আপনারা ব্যবসায়ীরা সমাধান করে নেন। এই মেলার ফলে পণ্যের চাহিদা জানা ও সে আলোকে পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের আইডিয়া পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এদিকে মেলার প্রথম দিনেও অনেক স্টলে চলেছে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। অনেক স্টল এখনও পুরোপুরি সাজানো হয়নি। তবে তারা বলছেন, তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সব স্টলই চালু হবে। মেলাও শুরু হবে পুরো দমে।
বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন বানানো হয়েছে। মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ইত্যাদি বিষয়কে তুলে ধরে করে এবারের বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে।
মেলার আয়োজক সংস্থা ইপিবি জানিয়েছে, এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরা হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাসও নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে এতে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিএফটিএফ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত তিনশ ফিট সড়কটির প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চালু হয়েছে বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৩০টি লাল বাস।
নতুন স্থানে বাণিজ্য মেলা আয়োজনে নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে ইপিবিকে। তবে এবছর সব সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে সামনের বছরগুলোয় আর পেছনে তাকাতে হবে না বলে মনে করেন ইপিবির কর্মকর্তারা।
ইপিবি জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতর মোট ৩০৯টি স্টল আছে। তবে প্রথমবার নতুন ভেন্যু এবং করোনাকাল বিবেচনায় বসাছে দেশি-বিদেশি ২২৫টি স্টল। সেগুলোকে আকর্ষণীয় করতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কর্মীরা। আর বাইরের স্টলগুলো অনেকটাই এগিয়ে। কেউ কাঠের মধ্যে রঙ বসাতে ব্যস্ত, কেউ কাচের অন্তরালে সাজিয়েছেন স্টল।
ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেলা কেন্দ্রের লেআউটে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে মিলে আপাতত ২২৫টি স্টল করা হয়েছে। এরমধ্যে ভেতরে ১৫৪টি, বাইরে ৭১টি স্টল। ধারণক্ষমতা বেশি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল রাখা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় আগতদের গাড়ি রাখার জন্য বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে রাখা যাবে এক হাজার গাড়ি। সেন্টারের দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার। সেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় রাখা যাবে আরও এক হাজার।
জানতে চাইলে স্টলের এক কর্মী জানিয়েছেন, ‘এখনও সেভাবে জমেনি মেলা। তবে সবেতো শুরু, মেলার পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা সময় বলে দেবে।’
উল্লেখ্য, করোনার কারণে ২০২১ সালে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন