শিরোনাম
এস-ফ্যাক্টর নামে একটি ওষুধকে সর্বরোগের মহৌষধ যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ওষুধ বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল চক্রটি। এমনকি এ ওষুধ করোনা প্রতিরোধ এবং সৌন্দর্যবর্ধনকারী প্রসাধনী হিসেবেও কাজ করে বলেও প্রচার করে তারা। ৪ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো এ ভুয়া ওষুধ। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই এটির। সূত্র: প্রথম আলো
এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের প্রধান কাজী আল আমিনসহ ১৭ জনকে আটক করেছে র্যাব। গত দুদিন রাজধানীর পল্টনে ‘সুইসড্রাম ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট কোম্পানি’ নামের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। বুধবার পল্টন থানায় এ ঘটনায় মামলা করে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, দুটি সিল, দুটি ব্যানার, চারটি ডায়েরি ও খাতা, একটি রেজিস্টার, কোম্পানির ১২৫টি লিফলেট, প্রতারণায় ব্যবহৃত সুইসড্রাম কোম্পানির ভুয়া ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী, সুইসড্রাম কোম্পানির ২৫ সেট ডিস্ট্রিবিউটর ওয়ার্কিং ফাইল, ২৩টি মুঠোফোন ও নগদ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা জব্দ করা হয়।
র্যাব বলেছে, সুইসড্রাম ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট কোম্পানি একটি প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান। কাজী আল আমিনের নেতৃত্বে প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার ও অসচ্ছল তরুণ–তরুণী এমনকি শিক্ষিত লোকজনকে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের কাছ থেকে এবং তাদের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে সদস্য হওয়ার নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে চক্রের সদস্যরা। এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় প্রতারণাসহ দুটি মামলা হয়েছে।
র্যাব-৪–এর পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এ ওষুধ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর, যা ক্যানসার ও অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি করে।
র্যাবের দুজন কর্মকর্তা জানান, চক্রের হোতা কাজী আল আমিন নিজেকে সুইসড্রাম কোম্পানির পরিচালক বলে পরিচয় দিতেন। তিনি দামি গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন। কোম্পানির নতুন সদস্যদের প্রলুব্ধ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। চক্রটি নতুন সদস্যদের নানা কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিসে নিয়ে আসত। এরপর তাদের প্রতি গ্রাহক অথবা টার্গেট পূরণের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কমিশন দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হতো ও অধিক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখানো হতো।
র্যাবের এই দুই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানান, সুইসড্রাম কোম্পানি মাঝারি শিক্ষিত বেকার, নিরীহ যুবক ও শিক্ষিত সরল শ্রেণির লোকজনকে মোটিভেশনাল বক্তব্য দিয়ে ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সদস্য হিসেবে সুইসড্রাম অ্যাপস-এ অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ঘন ঘন তাদের অফিস পরিবর্তন করত।
সুইসড্রাম কোম্পানিতে নতুন সদস্যদের পাঁচটি ক্যাটাগরির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। ১ ও ২ ক্যাটাগরিতে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকার বিনিময়ে একটি প্যাকেট ওষুধ ও ৩, ৪ নম্বর ক্যাটাগরিতে ২৬ হাজার ২০০ থেকে ৫৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ৬-১৪ প্যাকেট ওষুধ এবং ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ২৮ প্যাকেট ভুয়া ওষুধ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নির্দিষ্ট কোনো সাইনবোর্ড ও ঠিকানা ব্যবহার করত না।