সাত সংসদ সদস্যকে হারানোর বছর

ফানাম নিউজ
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০০

বিদায়ী বছরে (২০২১ সাল) সাত সংসদ সদস্যকে (এমপি) হারিয়েছে জাতীয় সংসদ। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের। তিনজন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। মহামারির কারণে সংসদ ভবনে তাদের কারও জানাজা হয়নি।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস

চলতি বছরের মার্চ মাসে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসকে হারায় জাতীয় সংসদ। সিলেট-৩ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। হ্যাটট্রিক করলেও হেরে যান করোনাভাইরাসের কাছে। ২০২১ সালের ১১ মার্চ তার মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তার মৃত্যুর সংবাদ নির্বাচনী এলাকা ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমায় পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

আসলামুল হক

২০২১ সালের ৪ এপ্রিলে মৃত্যু হয় আসলামুল হকের। স্ট্রোক করে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনবারের এই সংসদ সদস্য। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

সে সময় চলা সংসদ অধিবেশনে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সত্যিই খুব কষ্টকর। এই সংসদের বেশ কয়েকজনকে আমরা হারালাম। আসলাম সুস্থ ছিলেন। গতকালও সংসদে এসেছিলেন। আজকে নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাই হচ্ছে মানুষের জীবন। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।

আবদুল মতিন খসরু

আসলামুল হকের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই একই মাসে আরেকটি দুঃসংবাদ আসে। এবার ১৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যু হয়। তিনি করোনাভাইরাসে মারা যান।

১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া খসরু ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২১ সালের ১০ ও ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তিনি হয়েছিলেন সভাপতি। ১২ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেন। কিন্তু দায়িত্বের মেয়াদ শেষ না হতেই ৭১ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান।

অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ

সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ ছিলেন কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। ৭৩ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ রাজনীতিক চান্দিনা থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি।

পিত্তথলির পাথরের অপারেশনের জন্য ২০২১ সালের ২ জুলাই আলী আশরাফকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসে ক্ষতসহ দেখা দেয় নানা সমস্যা। ৯ জুলাই নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাকে। ২০২১ সালের ৩০ জুলাই মৃত্যু হয় তার।

হাসিবুর রহমান স্বপন

এরপর চিরবিদায় নেন সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। সবাই দেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেও তুরস্কের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।

এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক থেকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন হাসিবুর রহমান স্বপন। কিন্তু ২৫ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ফের কিডনি জটিলতা দেখা দেয় তার। চিকিৎসার জন্য ২৯ আগস্ট পুনরায় যান তুরস্কে। কিন্তু সেখান থেকে তার আর দেশে জীবিত ফেরা হয়নি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

হাসিবুর রহমান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ৮০’র দশকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন।

পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ঐকমত্যের সরকার গঠনের ডাক দিলে তিনি তাতে যোগ দিয়ে শিল্প উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সে সময় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করলে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী

জাতীয় পার্টির (জাপা) সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী মারা যান ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং চট্টগ্রামের এই নারী ছিলেন অধ্যাপকও।

একাব্বর হোসেন

সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবশেষ না মারা যান মো. একাব্বর হোসেন। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর মৃত্যু হয় তার। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৬ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

একাব্বর হোসেন টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য। এছাড়া ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

ধানমন্ডি-৭ নম্বর রোডের বায়তুল আমান মসজিদে তার প্রথম জানাজা হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদের হুইপ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার প্রতি ফুল দিয়ে জানানো হয় শ্রদ্ধা। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

মৃত্যুবরণকারী এসব সংসদ সদস্যের জানাজা হয়নি সংসদ ভবনে। অথচ কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে সংসদে অনুষ্ঠিত জানাজায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ছাড়াও নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হলে পান গার্ড অব অনার। জানাজায় সহকর্মীরা ছাড়াও সংসদে কর্মরত ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীরা অংশ নেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তাদের ভাগ্যে এসব জোটেনি।

জাতীয় সংসদে আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আসলে জীবনটাই হয়ে গেছে এমন, কে যে কখন আছে, কে যে কখন নাই, তার কোনো হিসাবই নেই।

সূত্র: জাগো নিউজ