শিরোনাম
‘বন্দি দশা থেকে বের হতে গেলে যেসব কথা বলা দরকার তাই আমার স্ত্রী বলেছেন। এখান থেকে বের হতে পারলে আমার অনেক কথা বলার রয়েছে।’ কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী মোবাইল ফোনে এসব কথা বলেন।
রোববার রাতে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে কথা হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের। আদালতে নিজের স্ত্রীর দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার যে কথা পুলিশ বলেছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্দি দশা থেকে বের হতে গেলে যেসব কথা বলা দরকার তাই আমার স্ত্রী বলেছেন। এখান থেকে বের হতে পারলে আমার অনেক কথা বলার রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি মাদক বা অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকি তাহলে প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। আমরা তো আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আসামিদের গ্রেফতার না করে আমাদেরকে কেন বন্দি রাখা হলো? এবং আমার স্ত্রীকে নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে, যা আইন পরিপন্থি।
কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী সোমবার বলেন, আমরা ৬ দিন পুলিশের হেফাজতে ছিলাম। ফলে চাপের মুখে অনেক সত্য আড়াল করে মামলা করতে হয়েছে। এখন আমরা মুক্ত ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। মামলা ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হুমকির মুখে অনেক সত্য আড়াল করতে হয়েছে দাবি করে উচ্চ আদালতে আবারো মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী।
জবানবন্দি দেওয়ার তিন দিন পর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেছেন উল্লেখ করে মোবাইল ফোনে সোমবার গৃহবধূর স্বামী এসব কথা বলেন। তবে কে বা কারা তাদের হুমকি দিয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। রোববার রাতে ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের ঢাকার উদ্দেশে বাসে তুলে দেয় বলে জানান ওই নারীর স্বামী।
এদিকে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে কক্সবাজারে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ আসামির ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকালে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক হামীমুন তানজিম এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, সোমবার দুপুরে গ্রেফতার তিনজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। দীর্ঘ শুনানির পর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
এ তিন আসামি হলেন- রেজাউল করিম (২৫), মামুনুর রশীদ (২৮) ও মেহেদী হাসান (২১)।
এর আগে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ধর্ষণের ঘটনার পর আদালতে দেওয়া ১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ভুক্তভোগী নারী বলেছিলেন, সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাতে কক্সবাজার এসেছিলেন তিনি। অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সেই টাকা দিতে না পারায় তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে একটু ঝুপড়ি ঘরে পরে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ফের ধর্ষণ করে আশিক।
এদিকে এই ধর্ষণকাণ্ডের মূলহোতা আশিককে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার সকালে র্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত স্বীকারোক্তি জানিয়েছে র্যাব। এখন পর্যন্ত এ মামলায় মূলহোতা আশিকসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে কক্সবাজার শহরের সন্ত্রাসী আশিক ভুক্তভোগী এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের হোটেল জিয়া গেস্ট ইন থেকে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে।
ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে হোটেলের ম্যানেজার ছোটনকে আটক করে র্যা ব। এ ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহারনামীয় ৪ জনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- আশিকুর রহমান ও তার তিন সহযোগী ইস্রাফিল খোদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। মামলাটি ট্যুরিস্ট পুলিশ তদন্ত করছে।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ভিকটিম যদি উচ্চ আদালতে মামলা করতে চান তাহলে করতে পারেন। এখানে তাকে কেউ বাধা দিবে না। তবে সত্য আড়াল করার জন্য তাদের কেউ হুমকি দিয়েছে; এমন কোনো অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী বা তার স্বামী আমাদের জানায়নি। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এসপি মো. জিল্লুর রহমান।
সূত্র: যুগান্তর