শিরোনাম
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিদের চিকিৎসা সরকারি খরচে (বিনা ফিতে) করার দাবিতে রিট আবেদন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এই দুর্ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রিটে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের এবং দগ্ধ হয়ে আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে আপাতত ১০ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আর্জি জানানো হয়েছে।
এছাড়া রিটে দেশের নৌরুটে কী পরিমাণ নৌযান চলাচল করে এবং তাদের মধ্যে কতটির লাইসেন্স আছে এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানানোর জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডব্লিওটিএর চেয়ারম্যান এবং লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বরগুনা এলাকার অধিবাসী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৌমিত্র সরদারের পক্ষে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমান এই রিট আবেদন করেন। রিট করার বিষয়টি সেমবার (২৭ ডিসেম্বর) জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী আনিচুর নিজে।
তিনি বলেন, দেশের নৌরুট সৃষ্টি হওয়ার ইতিহাসে এত বড় ভয়াবহ ঘটনা কখনো ঘটেনি। তাই এই দুর্ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে এবং কত সংখ্যাক নৌযান চলাচল করছে তার তথ্য জানতে এই রিটটি করা হয়েছে।
একই ঘটনায় রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আরও একটি রিট করা হয়েছে। আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট আবেদনটি করেন। রিটে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের ৫০ লাখ এবং দগ্ধ হয়ে আহতদের ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি ও ঘটনার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ রোববার বলে, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটিতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের জন্য ৫০ লাখ এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। তাদেরকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না সেই মর্মে রুল জারির আর্জিও জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে অন্তবর্তী আদেশ প্রার্থনাও করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ১০ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্যে ৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে একইসঙ্গে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য কমিশন গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। রিটে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডব্লিওটিএর চেয়ারম্যান এবং লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দর করা রিট আবেদনটি আজ সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্যে উপস্থাপন করা হতে পারে। রিটকারী আইনজীবীরা এ তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। আগুনে দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৬ জন। ২২ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। আর ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন গ্রামপুলিশের এক সদস্য।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান জানান, পোনাবালিয়ার গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
সূত্র: জাগো নিউজ