মাদক কমাতে মদে ছাড়, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা

ফানাম নিউজ
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৪৪

যুব সমাজকে মাদক থেকে সরিয়ে আনতে মদ ও গাঁজায় ছাড় দিতে আলোচনা করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে, অ্যালকোহল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিলে তরুণরা মাদক সেবন থেকে সরে আসতে পারে বলে আলোচনা করা হয়। তবে বৈঠকে মদ উন্মুক্ত করার বিষয়ে ছাড় দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংসদীয় কমিটি বলেছে, অ্যালকোহল উন্মুক্ত করার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। অ্যালকোহল আমদানিতে কর কমানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত নেয়া যেতে পারে।

ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, ড্রাগ এবং অ্যালকোহল দুটি ভিন্ন জিনিস। অ্যালকোহলের প্রতি কিছুটা ছাড় দিলে ড্রাগ সেবন কিছুটা কমতে পারে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত ও নির্দেশনা প্রয়োজন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশে অ্যালকোহলের ওপর ৬০০ শতাংশ কর নির্ধারণ করা আছে। দেশের সব ক্লাবে অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে। কিন্তু তারা কেউ আমদানি করে না। কারণ, ট্যাক্স দিতে হয় বেশি। ক্লাবগুলো বেআইনিভাবে চোরাই পথে আসা মদ বিক্রি করে, যার কারণে দাম কম, ক্রেতা বেশি। এতে করে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাহলে মদ আমদানির ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করে কী লাভ হলো?

র্যা বের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমেরিকা ও কানাডা গাঁজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে মাদক কখনও বন্ধ করা যাবে না। তবে হয়তো কিছু দিনের জন্য কমিয়ে আনা যেতে পারে। কারণ, মাদকের বিকল্প কিছু একটা সামনে নিয়ে আসতে হবে।’ তাই অ্যালকোহল, মদ, গাঁজা এগুলো সম্পর্কে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে তিনি মত দেন।

কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘মদ, বিয়ার বা অ্যালকোহলের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে যদি রাজস্ব বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা-ই করা উচিত। ড্রাগ অর্থাৎ আইস, ইয়াবা, এলএসডি এগুলো ভয়াবহ ক্ষতিকর মাদক। মদ, বিয়ার, গাঁজা ইত্যাদিতে যদি ৫%-এর নিচে অ্যালকোহল থাকে, তাহলে এগুলো বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া উচিত।’ ‘গিয়ার’ নামে ড্রিংকস ৪.৯% অ্যালকোহল দিয়ে বাজারজাত করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যুব সমাজকে মাদকের নেশা থেকে বাঁচাতে এসব কিছু বিবেচনা করার জন্য সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ করেন।

সংরক্ষিত আসনের রুমানা আলী বলেন, ‘যেসব মাদক হালকা ক্ষতিকর সেগুলোর ব্যবহার উন্মুক্ত করা যেতে পারে এবং যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ক্ষতি হয়, সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।’

কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৈঠকে বলেন, যুবসমাজকে মাদক থেকে সরিয়ে আনতে বিকল্প ব্যবস্থা অবশ্যই দরকার। তবে আমাদের বুঝতে হবে ক্ষতিকর ড্রাগ কোনটা? এলএসডি, ইয়াবা, হেরোইন এগুলো ক্ষতিকর বিধায় যারা সেবন করে, তাদের ব্রেন ও লিভার দুই বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। তাই এগুলো থেকে যুবসমাজকে সরানোর উপায় খুঁজে বের করার বিকল্প কী আছে, তা নিয়েও সরকার কাজ করছে।

কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু বলেন, ‘অ্যালকোহল সেবন উন্মুক্ত করার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। অ্যালকোহল আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে চোরাই পথে বা অবৈধ পথে আমদানি হলে লাইসেন্স বাতিলসহ আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। অ্যালকোহল কী পরিমাণ মাত্রায় সেবন করা যায়, তার জন্য বিভিন্ন নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞ রয়েছে। ড্রাগ অর্থাৎ মাদক বলতে যেটা বোঝাচ্ছে, সেটার কারণে দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। যেসব মাদক সেবন করলে যুব সমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যেমন- ইয়াবা, এলএসডি, আইস, হেরোইন ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য কঠোর হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘৫%-এর নিচে অ্যালকোহলযুক্ত বেভারেজ/পানীয় যেসব প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করছে, তাদের নির্দেশ দেওয়া দরকার যে সেসব বোতল বা ক্যানে অবশ্যই দৃশ্যামান করে অ্যালকোহলের মাত্রা লিখে দিতে হবে, যাতে অনুমোদিত মাত্রার অ্যালকোহল নিশ্চিত হলেও কেউ অজান্তে অ্যালকোহল গ্রহণ করতে না পারে।’

পরে কমিটির সভায় ৫%-এর নিচে অ্যালকোহলযুক্ত সব পানীয়ের বোতল/ক্যানে (হান্টার ও গিয়ারসহ) দৃশ্যমান করে অ্যালকোহলের পরিমাণ উল্লেখ করে মুদ্রণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উৎপাদনকারী এবং আমদানিকারকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।

মো. শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কমিটি সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ অংশগ্রহণ করেন।