শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে শিখেছেন কীভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হয় এবং কীভাবে তাদের জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্ন দেখেছিলেন, আবারও একটি সোনার বাংলা তৈরি করার, যেমনটি আমাদের ভূমি প্রাচীনকালে পরিচিত ছিল। তিনি গণতন্ত্র, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এটি শেষ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক দর্শনে এবং সারাজীবনের আলোবর্তিকা হয়ে উঠেছিল। আমি সবসময় তার পরামর্শ ও উদাহরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এমআইটি প্রেস ডাইরেক্টে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এই কথা তুলে ধরেছেন।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কথা উদ্ধৃত করে আরও বলেছেন, ‘তুমি কি চটকদার, দামি শাড়ি- গয়না পরবে? বেশিরভাগ মানুষ আজকাল এক বেলা খাবারও খেতে পারে না, আর তুমি কি দেখাতে চাও তুমি কতটা ধনী? দয়া করে এগুলো পরিধান করবে না, সাধারণ কিছু পরিধান করবে যাতে তুমি এই দেশের দরিদ্র মানুষের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করতে পারো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সেই কথাগুলো কখনোই ভুলতে পারবেন না, যাকে জনগণ ভালবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ বা বাংলাদেশের বন্ধু বলে ডাকে। ১৯৬০ এর দশকে তাকে এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল যাতে প্রতিফলিত হয় জনগণ তাকে কতটা ভালোবাসত। এটি কেবল একটি উপাধি ছিল না। বরং এটি হচ্ছে মানুষের ভালোবাসার প্রতিফলন।
স্বাধীনতার জন্য ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দীর্ঘ ও কঠোর সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অগ্রণী ভূমিকা ও নিষ্ঠার ওপর আলোকপাত করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ তার মধ্যে এসব প্রকৃত গুণ দেখতে পেতো যা তাদের স্বাভাবিকভাবে তার কাছে আকৃষ্ট করতো এবং তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা পেতে উৎসাহিত করতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবের আহ্বান জনগণের হৃদয়ে খুব গভীরভাবে সাড়া জাগিয়েছিল। তাই তারা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে অকল্পনীয় নৃশংসতা চালিয়েছিল তা কেবল গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয় এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। এইভাবে তার পিতার সিকি শতাব্দী ধরে লালন করা স্বপ্ন পূরণ হয়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, অতীতে বঙ্গবন্ধুর ঘন ঘন কারাবরণ করার কারণে, তিনি ও তার বোন এবং ভাইয়েরা তাদের পিতার সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, কিন্তু কখনই তার অপার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হননি। তিনি বলেন, তাঁর মা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের তাকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করেছিলেন। তার মা তাদের পাশে ছিলেন, তার সব সন্তানরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করেছিলেন।
‘আমরা আমাদের বাবাকে খুব মিস করেছি। তার ঘন ঘন অনুপস্থিতি তার আদর্শবাদের প্রতি আমাদের আনুগত্যকে আরও গভীর করে তুলেছে। তিনি কারাবাসের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন এবং এর কারণ কি ছিল আমরা তা সম্পূর্ণরূপে অবগত ছিলাম। তার আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অনুরূপ ত্যাগ স্বীকার করা সহজ করে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকলেও বাংলাদেশ এখন চাল, অভ্যন্তরীণ মাছ ও সবজি উৎপাদনকারী বিশ্বের শীর্ষ তিনটি দেশের একটি। এটি এখনও দ্রুত তার শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনছে।
তিনি বলেন, দেশ বিশ্বে সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ বৃহত্তম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বঙ্গোপসাগর থেকে সামুদ্রিক মাছের উৎপাদনও বেড়েছে। আমরা গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পোশাক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং দেশ ২০২০ সালে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক ছিল।
বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আয় ২০২০ সালে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে যে, বাংলাদেশ শীঘ্রই স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।
তিনি বলেন, এই মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশ দুটি বড় মাইলফলক উদযাপন করেছে। গত বছরটি তার বাবার ১০০তম জন্মদিন হতো এবং এই বছরটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্জনের দিকে আমি যখন ফিরে তাকাই, তখন আশা করি আমার বাবা এখন আমাদের দেখতে পাচ্ছেন। আমি জানি যে, আমরা কতদূর এসেছি তা নিয়ে তিনি কতটা গর্বিত হতেন এবং আমি জানি তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেবেন যে, আরও কাজ করতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের অদম্য চেতনাই আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা তার সকল স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।
সূত্র: জাগো নিউজ