শিরোনাম
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে ডাকাত বানিয়ে হত্যার জন্য আসামি নুরুল আমিন ও আয়াজ উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন ওসি প্রদীপ। মেজর সিনহা হত্যা মামলার তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনে দশম সাক্ষী হাফেজ জহিরুল ইসলাম আদালতে এমন কথা জানান। সূত্র: জাগো নিউজ
জহিরুল বলেছেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা জামে মসজিদের ইমাম আমি। ঘটনার রাতে উত্তর মারিশবনিয়া ওমরুল কুরান জামে মসজিদে এশার আজান দিচ্ছিলো। আমিও মাইকে এশার আজান শুরু করি। আমার আজান শেষ হয়। এ সময় উত্তর মারিশবনিয়া ওমরুল কুরআন জামে মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছিলো পাহাড়ে বাত্তি দেখা যায়, এলাকার মানুষ সতর্ক থাকবেন ওরা ডাকাত। আমি নিজের কানে শুনতে পাই মাইকিং করা ব্যক্তি নিজামুদ্দিন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই মসজিদের ইমাম সাহেব মাওলানা মুক্তারকে ফোন করি, আমি নিশ্চিত হয়ে জানতে চাই- এ মাইকিং করছে কে? তখন আমি নিশ্চিত হই ওই ব্যক্তি নিজামুদ্দিন। এরপর আমরা আমাদের মসজিদে এশার ফরজ নামাজের আগের সুন্নত আদায় করি এবং আমার ইমামতিতে এশার ফরজ নামাজ আদায় করি। আমরা মোনাজাত করে ফেলি।’
‘নামাজ শেষে চায়ের দোকানে গেলে আমার মামা মোহাম্মদ আলি বলেন, ভাগিনা উত্তর মারিশবনিয়া মসজিদে ডাকাত বলে মাইকিং করে দেওয়া হয়েছে, তুমিও মাইকিং করে দাও। আমি উত্তরে বলি, মাইকিং করতে হবে না। উনারা সেনাবাহিনীর লোক আমি নিজে পাহাড়ে যেতে দেখেছি। ওই সময় আমি সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত লোকটার বর্ণনা দেই। ওনার সঙ্গে আরেকজন আছে এটাও বলি।’
আদালতে সাক্ষী জহিরুল বলেন, ‘এরপর আমি ডিসি রোড দিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হই। আমি মুইন্না পাহাড়ের কাছাকাছি গেলে দেখতে পাই দক্ষিণ দিক থেকে নুরুল আমিন ও আয়াজ আসছে। নুরুল আমিন ও আয়াজ আমাকে বলে যে, আমরা মাইকিং করে দিয়েছি তুমি কেন মাইকিং করো নাই। আমি বলি, মাইকিং করার কোনো প্রয়োজন নাই, এরা সেনাবাহিনীর লোক। ওরা বলে, এরা সেনাবাহিনীর লোক নয়, এরা ডাকাত। এরপর তারা আমার হাত থেকে টর্চ লাইট নিয়ে মুইন্না পাহাড়ের দিকে টর্চ মারতে মারতে যায়।’
‘আমি বলি, পাহাড়ের দিকে বাত্তি মারিও না, ওরা সেনাবাহিনীর লোক। নুরুল আমিন ও আয়াজ আমাকে বলে এত রাত্রে কিসের সেনাবাহিনীর লোক? এরা আব্দুল হাকিম ডাকাত, সেনাবাহিনীর ড্রেস পরে ডাকাতি করতে এসেছে। আয়াজ ও নুরুল আমিন আমাকে বলে যে, শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা ছিটখালি পর্যন্ত এসেছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ মুইন্না পাহাড়ে আসার জন্য বের হয়েছে।’
দশম সাক্ষী হাফেজ জহিরুল আদালতকে আরও বলেন, ‘নুরুল আমিন আমাকে বলেছে, যে ওসি প্রদীপ তাদেরকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে ডাকাত মেরে ফেলার জন্য। তারা আরও বলেন, পাঁচ লাখ থেকে দুই লাখ টাকা তোরে দিমু আর দেড় লাখ করে আমরা নিমু আমি যেন ডাকাত বলে মাইকিং করে দেই। উত্তরে তাদেরকে আমি বলি, দুই লাখ টাকা আমার কোনো প্রয়োজন নেই, আমি মাইকিং করবো না।’
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে স্থানীয় মসজিদের ইমাম জহিরুল এমন সাক্ষ্য দেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিনহা হত্যা মামলার বিচারকাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক আইনজীবী।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, মঙ্গলবার আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী দিয়েছেন ডা. রনধীর দেবনাথ ও ইমাম জহিরুল ইসলাম। মেজর সিনহাকে হত্যার জন্য ভিন্ন পরিকল্পনাও ছিল আসামিদের হাতে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম জহিরুল।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল সিফাত। পরে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় চার দিনে আরও চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় প্রথম দিনে তিন জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনে মামলায় দশম সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল বলেন, মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৩ জনকে আদালত নোটিশ দিয়েছিলেন। গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও ২ নম্বর সাক্ষী জবানবন্দি দেন। দ্বিতীয় দফায় গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলায় চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তৃতীয় দফায় প্রথম দিনে আরও তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুই জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়।
মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত থাকা আসামিরা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।