শিরোনাম
যশোরে ৮ বছর নিঃসন্তান থাকার পর একসঙ্গে চার সন্তানের মা হয়েছেন লাক্সমিয়া (৩০) নামের এক নারী। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। একদিকে বিয়ের দীর্ঘ আট বছর সন্তান না হওয়া; অন্যদিকে পরপর চারটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ায় শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
একসঙ্গে চার সন্তান জন্মের খবরে হসপিটালে আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন রোগীর স্বজনেরা ভিড় করছেন। বর্তমানে ওই চার নবজাতক ও তাদের মা পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বজনেরা জানান, ২০১৪ সালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় জামদিয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের আব্দুর রহমান গাজীর ছেলে আবুল বাশারের সঙ্গে একই উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের চাড়াভিটা গ্রামের ইমামুল খার মেয়ে লাক্সমিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের আট বছর পার হলেও এই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। এটা নিয়ে উভয় পরিবারে হতাশা বিরাজ করছিলো। সন্তানের প্রত্যাশায় তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবশেষে হতাশার অবসান ঘটিয়ে সোমবার সকালে শান্তির বার্তা বয়ে আনে চার নবজাতক। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিক কুইন্স হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে চারটি সন্তান জন্ম দেন লাক্সমিয়া। যশোর মেডেকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার তার সিজার করেন।
এদিকে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল জুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে ওই দম্পতির স্বজন ও উপস্থিত লোকজনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি লক্ষ্য করা গেছে। আনন্দের আতিশয্যে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা স্বপ্রণোাদিত হয়ে অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বরত সেবিকা, ওই দম্পতি এবং তাদের স্বজনের মিষ্টিমুখ করান।
নবজাতকদের চাচা বাহারুল ইসলাম জানান, সন্তান না হওয়ায় ভাই-ভাবীর সংসারে শান্তি ছিলো না। যশোর-নড়াইল বিভিন্ন জায়গায় কবিরাজি চিকিৎসাও করানো হয়েছে। তাতেও কোনো সুফল মেলেনি। আল্লাহ ইচ্ছায় দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো আমাদের বংশরের প্রদীপ এলো। আমাদের পরিবার ও ভাবীর পরিবারে এখন খুশি বিরাজ করছে।
সন্তান না হওয়ার যন্ত্রণায় দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন নওয়াপাড়া বন্দর এলাকার জাহাজ শ্রমিক আবুল বাশার। আবেগাপ্লুত হয়ে চার নবজাতকের এই জনক বলেন, 'সন্তান না হওয়া যন্ত্রণা যে কতো কষ্টের তা বুঝাতে পারবো না। আজ জীবনের অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। আপনারা সবাই আমার চার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।'
নবজাতকের মা লাক্সমিয়া খাতুন বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমার সন্তান হতো না। চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে আমাদের ঘর আলো করে সন্তান এসেছে। করোনার মধ্যে সন্তান পৃথিবীতে আসবে- এটা ছিলো আমাদের কাছে বড় টেনশনের ব্যাপার। কিন্তু সব টেনশন দূর করে আনন্দের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে চার সন্তান। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাই চিকিৎসক নার্গিস আক্তার ম্যাডামকেও।'
যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে এই দম্পত্তির কোনো সন্তান হয় না। জেলার বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েও কাজ হচ্ছিল না। দেড় বছর আগে আমার কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন তারা। এই দম্পত্তির দুইজনেরই কিছু সমস্যা ছিলো। চিকিৎসায় তিন মাসেই এই গৃহবধূর পেটে বাচ্চা আসে। তার দুই মাস পরেই জানতে পারি ওই নারীর পেটে চার বাচ্চা। অনেক সময় একাধিক বাচ্চা হলে ২-১টি মারা যায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই নারীর কোনো সমস্যা হয়নি। সোমবার সিজারের মাধ্যমে তার দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। তারা সবাই ভালো রয়েছে। বাচ্চাদের আলাদা আলাদা ফুল ছিলো, চারটা বাচ্চারই একই রকমের ওজন হয়েছে।'