শিরোনাম
‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না’। হ্যাঁ, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যে পতাকা অর্জন, তা বুক উঁচিয়ে উড়িয়ে আজ শহীদদের স্মরণ করছে বীর বাঙালি।
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে বাঙালি। বিজয়ের দিন উদযাপনে বীর বাঙালি বুক উঁচিয়ে ওড়ায় লাল-সবুজের পতাকা। যে পতাকা অর্জনে বাংলার মানুষের ২৬ বছরের সংগ্রাম।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন ৩০ লাখ মানুষ। যে পতাকা অর্জনে এত এত ত্যাগ, সেই পতাকা নিয়ে গর্ব করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই পতাকা শুধু উড়িয়েই শেষ নয়, ভালোবেসে ধারণ করতে হবে বুকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শহীদদের রক্তে অর্জিত দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিজয় দিবসকে ঘিরে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শুরু হয় পতাকা বিক্রির ধুম। রাস্তাঘাটে দেখা মেলে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা। তাদের হাতে-কাঁধে ছোট-বড় আকারে পতাকা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। বিজয় মিছিল, র্যালিতে পতাকা হাতে অংশ নেন সবাই।
রাজধানীর গুলিস্তানে পতাকা বিক্রি করছিলেন ৫৫ বছর বয়সী মামুন। তিনি সারা বছর সবজি ব্যবসা করেন। তবে ডিসেম্বর এলেই পতাকা কাঁধে বের হন তিনি। তবে শুধু টাকা উপার্জনের জন্যই পতাকা বিক্রি করেন এমনটি নয়। অন্যরকম ভালো লাগা থেকে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করেন বলে জানালেন তিনি।
মামুন বলেন, ‘মানুষ আমার থেকে পতাকা কিনেন, এটা বেশ ভালো লাগে। শুধু টাকার জন্যই যে পতাকা বিক্রি করি, তা নয়। ভালো লাগা থেকে ডিসেম্বরে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করতে রাস্তায় নামি।’
তিনি বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, রুটি-রুজির তাগিদও তো আছে। এটা থেকে কিছু টাকাও আয় হয়। এবার ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনে গড়ে ৫০০ টাকা করে আয় করেছি। তবে এখন আরও বেড়েছে। ১০ তারিখের পর বিক্রি বাড়ে। দিনে হাজার টাকা থাকে। আর ১৫-১৬ ডিসেম্বর ভাগ্য ভালো থাকলে ভালো আয় হয়।’
তার মতোই ডিসেম্বর এলে পতাকা বিক্রি করতে রাস্তায় নামেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সিদ্দিক আলী বেপারী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কিশোর ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘিরে কিছু স্মৃতিও রয়েছে তার। প্রায় এক দশক ধরে বিজয় দিবস ঘিরে পতাকা বিক্রির পেশায় তিনি। তবে এবার এখনো ভালো আয়-রোজগার হয়নি বলে জানালেন তিনি।
সিদ্দিক আলী বেপারী বলেন, ‘এবার এখনো ভালো বেচা-বিক্রি হয়নি। তবে টাকাটা বড় বিষয় না। পতাকা নিয়ে ঘোরা এবং বিক্রি করা নেশার মতো হয়ে গেছে। পতাকা কাঁধে নিয়ে স্বাধীন দেশে হাঁটতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।’
রাস্তায় ঘুরে ঘুরে যারা পতাকা বিক্রি করেন, তাদের থেকেই কিনতে ভালোবাসে মাহবুবুল ইসলাম নামে এক পথচারী। তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ভূমিকার কথা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেক মা-বোন সভ্রম হারিয়েছেন।’
পরক্ষণে মাহবুবুলের কণ্ঠে আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও আমরা ঠিক কতটা স্বাধীন তা নিয়ে সন্দিহান। মতপ্রকাশে পদে পদে বাধা এখনো আছে। তবুও বাংলাদেশকে বুকের মাঝে ধারণ করি। লাল-সবুজের পতাকাকে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে চাই।’
পতাকা কিনতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সামী বলেন, ‘বিজয়ের দিনে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে বের হই। এদিনে হাতে লাল-সবুজের পতাকা না থাকলে বেশ বেমানান লাগে। তাই পতাকা কিনতে এসেছি।’
সূত্র: জাগো নিউজ