সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে রাজধানী, থাকছে হেলিকপ্টার টহল

ফানাম নিউজ
  ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১৩

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মহান বিজয় দিবস-২০২১ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজধানীকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশ, এপিবিএন, এসএসএফ, পিজিআরসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি ভেন্যুতে এসবি, এসএসএফ, র‌্যাব ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়াও বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বিজয় দিবসে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবেন তাদের অবস্থানের জায়গাসহ যেসব স্থানে তারা যাবেন সেখানে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া তারা যেসব সড়ক ব্যবহার করবেন সবখানেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

পুলিশ বলছে, রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি সবসময় আসে না। শতভাগের উপরেও যদি কিছু করার থাকে তা বাস্তবায়ন করা হবে। সন্দেহ হলে প্রতিটি ব্যক্তি ও যানবাহনে যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পালন করা পুলিশের জন্য অহংকার, মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়। পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবো।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন উদযাপন ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করছেন। এ সফরে ভারতের ফার্স্টলেডি, রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ মিলিয়ে ইতিহাসের এক অনন্য সময় পার করছে বাংলাদেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও জাতীয় সংসদের সামনে মুজিববর্ষের সমাপ্তি ও বিজয় দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে। সব মিলিয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সেসব অনুষ্ঠানস্থলের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। ১৬ ডিসেম্বর প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হবে বড় আকারে। সেখানে ছয়টি দেশ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক একটি প্যারেড হবে।

জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি থেকে ‘মহা বিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান হবে। এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেও থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারেও চলবে টহল।

১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে একটি শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। দেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পরিবেশ সবমিলিয়ে ৫০ বছরের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বরের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনাকে কেন্দ্র করেও নেওয়া হবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিজয় দিবস ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকার প্রত্যেকটি ভবনে পোশাকে ও সাদা পোশাকেন থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা। আমন্ত্রিত অতিথিদের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে পালন করা হবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত এক সপ্তাহ ধরে সব ভেন্যুর আশপাশ, আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবন, মেস, বাসাবাড়িতে ব্লক রেইড করা হয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

একইদিন বিকেলে অন্য একটি অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিজয় দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ভারতের রাষ্ট্রপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করবেন। তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবো আমরা। সন্দেহ হলে প্রতিটি ব্যক্তি ও যানবাহনে যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে। এ নিরাপত্তা ডিউটির গুরুত্ব সর্বাধিক।

গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। আমাদের প্রচুর সংখ্যক পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবির গোয়েন্দারা কাজ করবেন। এর সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তায় ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। অনুষ্ঠান সফল করতে আমরা সদা প্রস্তুত।

র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জাতীয় অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে র‌্যাব সদা তৎপর। সমগ্র দেশে র‌্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহের আশে-পাশে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও ইউনিফর্ম টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, র‌্যাবের টহল জোরদার করার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডগ স্কোয়াড ও র‌্যাবের বোম্ব স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সারাদেশে ভিভিআইপি, ভিআইপি, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের গমনাগমনের স্থানসহ জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন স্থানে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড টিম ও ক্রাইম সিন ভ্যানকে কৌশলগত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। সম্ভাব্য যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার প্রস্তুত হয়েছে।

সূত্র: জাগো নিউজ