শিরোনাম
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ব্যাপক ও প্রাণবন্ত বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারতের উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারত্ব ব্যাপক ও প্রাণবন্ত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তখন কোবিন্দ এসব কথা বলেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, তিনটি মেগা ইভেন্ট উদ্যাপনে অংশীদার হতে পেরে তিনি খুবই খুশি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে, এমন একটি সময়ে তিনি এই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত।
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিব বর্ষের সমাপনী দিবস উদ্যাপন এবং বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিনি তিন দিনের সফরে আজ বাংলাদেশে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালকে বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ, এ বছর দেশ জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে।
বাংলাদেশ ভারতকে এক পরম বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমনকি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও উভয় দেশের মধ্যে সফর–বিনিময় দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের সাক্ষ্য বহন করে।’
শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ভারত সরকার এবং তাদের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি তিনটি অনুষ্ঠান উদ্যাপনে যোগ দিতে চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক ও সফল বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন।
১৯৬৫ সালের ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বিভিন্ন রুটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সেই রুটগুলো পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান সহযোগিতার জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে এসে খুশি হয়েছেন এবং কোভিড-১৯–এর পরে এটি তাঁর প্রথম সফর বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের আদর্শ উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু-বাপুজি ডিজিটাল প্রদর্শনী ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশই ভারত থেকে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণকারী প্রথম দেশ এবং কোভিড-১৯–এর ওষুধ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।‘কোভিড-১৯ একটি অদৃশ্য শক্তি, যা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের প্রশংসা করেন এবং আম পাঠানোর জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ওষুধ, কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন এবং প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম পাঠানোটা উভয় দেশের সহযোগিতার শুভেচ্ছার নিদর্শন এবং একে অপরকে সমর্থনের প্রতীক।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই তাদের নিজস্ব ধর্মীয় অধিকার ও আচার-অনুষ্ঠান পালনে স্বাধীন, এখানে কোনো বাধা নেই। ধর্ম ব্যক্তির, উৎসব সবার জন্য।’
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, রাজদীপ রায়, ভারতের রাষ্ট্রপতির সচিব কেডি ত্রিপাঠি, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো