বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী রামনাথ

ফানাম নিউজ
  ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৫৩

যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে ভারতের রাষ্ট্রপতি চলমান ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকার আশ্বাস দেন।

সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ তাদের স্বাগত জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, সাক্ষাতের সময় দুই রাষ্ট্রপতি দুই দেশের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

স্থল-নদী-আকাশ পথে উন্নত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বৈঠকে কোবিন্দ বলেন, এই কারণে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তিনি দু’দেশের বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ খাতে আরও বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধের নায়ক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলাদেশ মারাত্মক কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং আমরাও এতে গর্বিত।

রামনাথ কোবিন্দ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে। তিনি ভারতের জাতীয় দিবসের মার্চ-পাস্ট ইভেন্টে বাংলাদেশ দল এবং পরে ঢাকায় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতীয় কন্টিনজেন্ট সদস্যদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।

কোবিন্দ বলেন, এটি অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি প্রমাণ বহন করছে যখন উভয় রাষ্ট্রই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করছে।

এসময় রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, ভারত বাংলাদেশের খুব কাছের এবং বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র।’ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তা আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাণী পাঠিয়ে এবং এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সশরীরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকায় কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে। গত এক দশকে নিরাপত্তা, সীমান্ত বন্দোবস্ত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে দুই দেশের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়েছে এবং পরে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।

বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। নারীর ক্ষমতায়ন সম্প্রসারণে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বিষয়টি আরও বেগবান হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাক এবং সফররত ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা. সুভাষ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর ভারতের রাষ্ট্রপতি উপহার হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যবহৃত রাশিয়ান টি-৫৫ ট্যাঙ্ক এবং মিগ-২১ ভিনটেজ যুদ্ধ বিমানের দুটি রেপ্লিকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করেন। পরে বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন রামনাথ কোবিন্দ।

রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে ভারতের ফার্স্ট লেডি শ্রীমতি সবিতা কোবিন্দও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা পরস্পরের খোঁজ-খবর নেন এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।

ভারতের রাষ্ট্রপতির সৌজন্যে দেওয়া নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাও নৈশভোজে অংশ নেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন তারা।