শিরোনাম
সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের জন্য নিজের লেখা বইগুলোর স্বত্বাধিকার পেয়েছেন লেখক শেখ আবদুল হাকিম। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কপিরাইট অফিসের আদেশের বিরুদ্ধে করা সেবা প্রকাশনীর কাজী আনোয়ার হোসেনের রিট খারিজ করে আদেশ দিয়েছেন।
এর ফলে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক স্বত্ব পেলেন প্রয়াত লেখক শেখ আবদুল হাকিম।
এদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ। কপিরাইট অফিসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও ব্যারিস্টার ইফতাবুল কামাল অয়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।
এর আগে সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমের- কপিরাইট অফিসের এমন সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, কপিরাইট অফিসের এই সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন আদালত। ওই রুলের ওপর শুনানি চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
২০২০ সালে লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ।
হামিদুল মিসবাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিমকে স্বত্ব দিয়ে কপিরাইট অফিস ২০২০ সালের ১৪ জুন আদেশ জারি করে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৪ জুনের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন। রুলে এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় কপিরাইট অফিসের ওই সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি হবে না- তা জানতে চান আদালত।
রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন সংস্কৃতি সচিব, কপিরাইট অফিস, রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস এবং কপিরাইট বোর্ড।
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আবদুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনে অভিযোগ দাখিল করেন।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে আদেশ দেয়। ফলে দাবি করা মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমের হয়।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত আবেদনকারীর দাবি করা ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো। এছাড়া প্রতিপক্ষকে আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করণ ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
কপিরাইট অফিসের এই আদেশের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সেবার কাজী আনোয়ার হোসেন।
সেই রিটটিই আজ খারিজ করে দিলেন আদালত। এর ফলে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের জন্য নিজের লেখা বইগুলোর স্বত্বাধিকার পেলেন শেখ আবদুল হাকিম।
বাংলাদেশের রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান লেখক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিম এ বছরের ২৮ আগস্ট মারা গেছেন। মৃত্যুর পর নিজের লেখা বইগুলোর স্বত্ব পেলেন তিনি।
সূত্র: জাগো নিউজ