শিরোনাম
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) ঋণ খেলাপি ১১ প্রতিষ্ঠানসহ ১৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন হাইকোর্ট। তাদেরকে গ্রেফতার করে আগামী ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি নামে তিনটি, এস এস ফিলিং স্টেশন, বাধন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শোভা ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লিমিটেড, সামীর কাদের চৌধুরী, সামিয়া কাদের চৌধুরী, সাজিয়া কাদের চৌধুরী, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নামে দুটি, জেসন অ্যাগ্রোভেট লিমিটেড, জেসন ব্রিডাস লিমিটেড ও জেসন ন্যাচারাল প্রডাক্ট লিমিটেড।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে পিপলস লিজিংয়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের কোম্পানি আদালতের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজিব উল আলম।
এর আগে গত ১২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলমকে চেয়ারম্যান করে এ বোর্ড গঠন করা হয়।
বোর্ডের সদস্যরা হলেন—সাবেক সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হাসান শাহীদ ফেরদৌস, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী তৌফিকুল ইসলাম, নুর-এ-খোদা আব্দুল মবিন, মওলা মোহাম্মদ, সঞ্চয়কারীদের প্রতিনিধি ড. নাশিদ কামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল কবির এবং এমডি হিসেবে থাকবেন আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
গত ২৮ জুন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে (পিএলএফএসএল) পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে ওইদিন আমানতকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব-উল আলম। পিএলএফএসএলের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
২৮ জুন মেজবাহুর রহমান জানিয়েছিলেন, ২০১ জন আমানতকারী একটি আবেদন করেছিলেন। আবেদনে তারা বলেছেন, পিপলস লিজিংকে রিভাইভ বা রিকনস্ট্রাকশ করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য শোনার পর আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিপলস লিজিং রিভাইভ করা হবে।
সুতরাং পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে অবসায়নের কার্যক্রম হচ্ছে না। এখন পিপলস লিজিং পুনরুজ্জীবিত হলো। এ জন্য একটি বোর্ড করে দেবেন আদালত।
বৃহস্পতিবার এই আইনজীবী জানান, আদালতের আদেশ অনুসারে ৩০ দিনের মধ্যে ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ঋণ গ্রহীতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে বলেও আদেশে বলা হয়।
এরমধ্যে ২১ জনের সঙ্গে পিএলএফএসএল যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। ছয়জন আদেশ অনুসারে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করে। একজন অসুস্থ। অন্য ১৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়। পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই মামলার ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে আদালত পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ঋণ খেলাপিদের (ঋণ গ্রহণ ও খেলাপের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে) ২৮০ জনকে তলবও করেছিলেন।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মধ্যে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না তারা।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়া, অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।
পরে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র: জাগো নিউজ