শিরোনাম
রাজধানী ঢাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার পাশাপাশি নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও নিতে চায় দুই সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে সংস্থা দুটির শীর্ষ পর্যায় থেকে সরকারের কাছে দাবি তোলা হয়েছে। তারা বলছেন, কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা শুরু করলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হয়ে দাঁড়াবে। তখন এটি যদি পুলিশের আন্ডারে থাকে তাহলে সমন্বয়ে সমস্যা দেখা দেবে। উন্নত শহরের মতো যদি এ বিষয়টি সিটি করপোরেশনের আওতায় আসে তাহলে নগরীকে যানজট মুক্ত ও সুশৃঙ্খল শহরে রূপ দেওয়া যাবে। আর নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করপোরেশনের এমন উদ্যোগ আলোর মুখ দেখলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। তবে এজন্য পুরো পরিকল্পনাসহ দায়িত্ব দিতে হবে।
যানজটের নগরী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গঠিত বস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করে সরকার। এরই মধ্যে কমিটির কাছে সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত সড়কে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে থাকা ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা করা হবে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ের কোনও গণপরিবহনের রাজধানীতে প্রবেশাধিকার না রেখে নগরীতে চলাচলরত আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার পরিবহনের পরিবর্তে ৯ হাজার ২৭টি গণপরিবহন পরিচালনা করা হবে। বিশৃঙ্খল এই গণপরিবহনে কীভাবে শৃঙ্খলা ফেরানো যায় সেই চিন্তাই করছে বাস রুট কমিটি।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন করার জন্য ১০ সদস্যের এ কমিটি করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সিটি করপোরেশন বলছে, লন্ডনসহ যানজটমুক্ত শহরগুলোতে রাজধানীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে মেয়রের কাছে। তাছাড়া প্রতিটি শহরেই নিয়ন্ত্রিত সিগন্যাল ব্যবস্থার মাধ্যমেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে সিটি মেয়র যে কোনও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারেন। একইভাবে বাস রুট বা কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা শুরু হলে এই ব্যবস্থাটিও এই কমিটির আওতায় আনা উচিত। তবেই শৃঙ্খলা স্থায়ী হবে।
বর্তমানে নগরীর প্রতিটি সিগন্যালে নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি থাকলেও পুলিশের হাতের ইশারায় চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। এসব সিগন্যাল বাতি এখন অকার্যকর। অধিকাংশ বাতির যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়েছে। সেকেলের এই ব্যবস্থাপনা বাদ দিয়ে পুরো সিস্টেমটিকে আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন।
দক্ষিণ সিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থার মেয়র এরই মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলতে শুরু করছেন। তিনি চান শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের আওতায় আসুক। তিনি এই বিষয়টি বাস্তবায়নের বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনায়ও যত বাধা আসুন তা বাস্তবায়ন করা হবে।
জানতে চাইলে বাস রুট কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নগরীতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য বাস রুটের দায়িত্ব নিয়েছি। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত এ কার্যক্রম শুরু হবে। এই ব্যবস্থাটি চালুর পর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার প্রয়োজন হবে। এটা আমরা চাই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও এর আওতায় আসুক।
জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, শুধু খণ্ডিতভাবে দায়িত্ব চাইলে হবে না। এজন্য পরিকল্পনাসহ পুরো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশেও এমন সিস্টেম রয়েছে। কিন্তু এখন মেয়ররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিবেন আর বিআরটিএ প্রতিদিন ইচ্ছেমতো যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে যাবে তা তো হতে পারে না। যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া না দেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলোসহ যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি ইতিবাচক হবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন