শিরোনাম
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়কে ফের গড়ে উঠেছে ট্রাকস্ট্যান্ড। এখন দিনের ২৪ ঘণ্টাই সড়কটিতে শতাধিক ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়। ফলে ওই সড়কে যান চলাচলে নগরবাসীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। সূত্র: জাগো নিউজ
স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাকস্ট্যান্ডের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কটিতে যানজট লেগে থাকে। তার মধ্যে আবার পুরো সড়ক ভরে গেছে ময়লা। এছাড়া সড়কের দুপাশে দেয়ালচিত্র ট্রাকের আড়ালে চলে যাওয়ায় আনিসুল হক সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত ট্রাকস্ট্যান্ড সরানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তবে ট্রাক শ্রমিক-মালিকেরা বলছেন, তেজগাঁওয়ে ট্রাক পার্ক করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি তিনতলা পার্কিং নির্মাণের কথা। কিন্তু ডিএনসিসি তা না করায় নিরুপায় হয়ে সড়কেই তারা ট্রাক রাখছে। বিকল্প ব্যবস্থা করলে সড়কে তারা আর ট্রাক রাখবে না বলে জানানো হয়।
ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি আগে ট্রাকস্ট্যান্ড ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সড়কটি দখলমুক্ত করতে গিয়ে চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তবে উদ্ধারের পর সংস্কার করে সড়কটির চেহারা বদলে দেন তিনি।
প্রায় ১০০ ফুট চওড়া এই সড়ক কারওয়ান বাজার, তেজতুরী বাজার ও ফার্মগেট এলাকাকে তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতন, হাতিরঝিল এবং রামপুরার সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং সাধারণ মানুষ এই সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে শতাধিক ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়েছে। মাঝ দিয়ে একটি করে গাড়ি চলাচল করতে পারে সেই পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রয়েছে। তবে এই জায়গায় যদি রিকশা-ভ্যান ঢোকে তাহলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এতে সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি হয়। আর সকালে গাড়ির চাপ বাড়লে লেগে যায় যানজট। বিকেলে অফিস ছুটি হলে আবার যানজট শুরু হয়। ফলে এক কিলোমিটারের কম এই সড়ক অতিক্রম করতে সময় লেগে যায় ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত।
তেজগাঁও বেগুনবাড়ি থেকে রিকশায় করে ফার্মগেটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া। রেলক্রসিং এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে এই সড়কটি পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন আনিসুল হক। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় সড়কটি সুন্দরই ছিল। স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতেন নাগরিকেরা। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর সড়কটি নিয়ে উদাসীন ডিএনসিসি। এর মধ্যে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও সড়ক থেকে ট্রাক সরাতে পারেনি সংস্থাটি।
ট্রাকচালক মোস্তাক বলেন, এই এলাকায় পার্কিং করার মতো জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় ট্রাক রাখতে হয়।
মেয়র আনিসুল হক সড়কেই বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ফেডারেশনের কার্যালয়। এই কার্যালয় সূত্র জানায়, তেজগাঁওয়ে দিনে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রাক আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে মেয়র আনিসুল হক সড়ক ও আশপাশের সড়কে এক হাজারের বেশি ট্রাক পার্কিং করা হয়। এসব ট্রাক তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে মালামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা সড়কে ট্রাক পার্কিং করার পক্ষে না। নিরুপায় হয়ে সড়কে পার্কিং করতে হচ্ছে। ডিএনসিসি ট্রাক টার্মিনাল করলে সড়কে আর ট্রাক থাকবে না।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আনিসুল হক সড়ক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ট্রাক টার্মিনাল স্থায়ী সমাধানে রেলগেট সংলগ্ন গণপূর্তের কাছে পরিত্যক্ত ২১ বিঘা জমি চাওয়া হবে। গণপূর্ত এই জমি ডিএনসিসিকে দিলে সেখানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড এবং মাটির ওপর মাল্টিলেভেল ট্রাক পার্কিং করা হবে। এতে তেজগাঁও এলাকায় সড়কে শৃঙ্খলা আসবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, মেয়র তেজগাঁও এলাকা পরিদর্শনের পরপরই গণপূর্তের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো জবাব পাইনি। আশা করি জনগুরুত্ব বিবেচনায় তারা এই জমি ডিএনসিসিকে হস্তান্তর করবে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যান। এর ১০ দিন পর ডিএনসিসির ২১তম বোর্ড সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই সড়কটির নাম করা হয় ‘মেয়র আনিসুল হক সড়ক’।