শিরোনাম
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিলেও এর প্রভাব পড়েছে সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে। টানা তিনদিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে সুন্দরবনের দুবলারচরে নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার মাছ। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলে ও মহাজনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাগর মোহনা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করেন জেলেরা। এ শুঁটকি দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাজারজাত করা হবে। চরের অভ্যন্তরে ১৩টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলার জেলে পল্লী। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এখানে প্রায় ৩০ হাজার জেলে অবস্থান করছেন।
৩ ডিসেম্বর থেকে দুবলার চরে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছে। ফলে শুঁটকি তৈরির সব মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। উত্তাল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে জেলেরা সাগর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। সহস্রাধিক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার বর্তমানে আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া, শ্যালা, মাঝের কিল্লাসহ শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের বিভিন্ন খালে অবস্থান করছে।
আলোরকোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী বুলবুল বলেন, বৃষ্টিতে চাতাল ও মাচার সব মাছ পচে গেছে। সাগরের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝড়ো বাতাস হচ্ছে। তিন দিন ধরে মাছ ধরাও বন্ধ আছে। সাগরে পানির উচ্চতা বেড়েছে। এতে চরের বেশিরভাগ জেলের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে চরের সব জেলে-মহাজনরা।
দুবলার আরেক জেলে আবুল বাশার বলেন, গত তিনদিনে আমরা যে মাছ পেয়েছি, তা শুকাতে পারিনি। এমন অবস্থায় মাছগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার যদি সূর্যের দেখা না পাই, তাহলে এখানে অবস্থান করা জেলে-মহাজনদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদের দাবি, তিনদিনের বৃষ্টিতে শুঁটকি উৎপাদনকারী ১০টি চরের কমপক্ষে তিন কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়েছে। এসব চরে এক হাজারেরও বেশি মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার বিভিন্ন খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাছ নষ্ট হওয়া এবং মাছ ধরতে না পারায় বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন জেলে ও মহাজনরা। তবে শুঁটকি খাত থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও জেলেদের ক্ষতির দিকটা কেউ দেখে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোথাও আবেদন করেও কোনো লাভ হয় না।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছরের জলোচ্ছ্বাসে বালুমাটি ধুয়ে চর অনেক নিচু হয়ে গেছে। ফলে সামান্য দুর্যোগেও জেলের তৈরি ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। যা পাঁচ বছর আগেও এমনটা হয়নি।
দুবলার চরের জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ রায় বলেন, তিনদিন ধরে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। এতে শুঁটকির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহাজনরা আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার ক্ষতির কথা বললেও এখন পর্যন্ত সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে কূলে। চারটি চরের ১০ হাজার জেলে যার যার ঘরে অবস্থান করছে। পানির উচ্চতা প্রায় ৬-৭ ফুট বাড়ায় বহু জেলের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। সব জেলে-মহাজনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অবকাঠামোগত কিছু ক্ষতি না হলেও দুবলার জেলে পল্লীতে অনেক মাছ নষ্ট ও পচে গেছে। তাছাড়া এখনও নতুন করে সাগরে মাছ ধরতে নামতেও পারছে না তারা।
সূত্র: জাগো নিউজ