শিরোনাম
করোনাকালে দেশের শ্রমবাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে কিশোরী ও নারীদের ওপর। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে প্রাধ্যান্য দিতে হবে। এ বিষয়টি খুবই জরুরি।
সম্প্রতি ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসডিপি) আয়োজনে এক আলোচনাসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
‘অনানুষ্ঠানিক খাতে দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরী ও নারী প্রশিক্ষণার্থীদের ওপর কোভিড-১৯ প্রতিকূলতা মোকাবিলা’ শীর্ষক এই আলোচনাসভা হয় রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কেএম তরিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। স্বগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট-এশিয়া, পিআরএল এবং মনিটরিং বিভাগের পরিচালক এএফএম শহীদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি অ্যান্ড প্রিভেনটিং ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির পরিচালক নবনিতা চৌধুরী, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির ইন-চার্জ তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নারায়ণ সি দাস। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ মিস ভিরা মেন্ডনকা, অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহরিয়ার ইসলাম, ইনফরমাল সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মির্জা নুরুল গনি শোভন সিআইপি। বক্তারা বলেন, গত বছর ব্র্যাকের একটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনার কারণে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের নিয়মিত আয় এবং কাজের সুযোগ যথাক্রমে ৬৬ এবং ২৪ শতাংশ কমে গেছে।
এছাড়া দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চলার কারণে মেয়েদের ঝরে পড়ার ঝুঁকিও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনাকালে ২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাল্যবিবাহের হার ২২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা থেকে নারীর ছিটকে পড়ার জন্য করোনাকে প্রধান প্রভাবক হিসাবে দায়ী করেন। এই অবস্থায় কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরদ্ধারের জন্য শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিচ্ছে ব্র্যাক। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচিকে প্রয়োজনানুসারে সাজানো হয়েছে।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কেএম তরিকুল ইসলাম বলেন, মুজিববর্ষে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য সব সংস্থা কাজ করছে। সরকার বেশকিছু শিল্পক্ষেত্র তৈরি করছে, যেখানে নারীরাও কাজ করবে। এত বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি নারী কর্মরত। কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তারা কী পরিস্থিতিতে পড়বেন, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে তাদের সংকট সামাল দেওয়া যাবে, এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি থাকাও দরকার।
সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ বলেন, সময়ের প্রয়োজনে দক্ষতা উন্নয়ন একটি পরিকল্পিত পছন্দ হওয়া উচিত। ঐতিহ্যগত শিক্ষার পরিবর্তে অনেকে দক্ষতা উন্নয়নের শিক্ষাকে বেছে নিতে পারেন।
সূত্র: যুগান্তর