দুদককে আরও গতিশীল হতে হবে, তদন্তকাজে দীর্ঘসূত্রতা

ফানাম নিউজ
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৪

প্রথমে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ অনুসন্ধানের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, এই মুহূর্তে দুদকের এক-চতুর্থাংশ অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমই মেয়াদোত্তীর্ণ।

বিদ্যমান আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (১৮০ দিন) ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ অনুসন্ধান এবং ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়নি।

মেয়াদোত্তীর্ণ মোট অনুসন্ধান ও মামলার তদন্তের হার ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আরেক হিসাবে, চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুদকের মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ১১১৯টি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তদন্ত ২০৩টি। দুদকের তদন্তের এমন ধীরগতিতে সম্প্রতি এক রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে দুদকের এই ধীরগতির কারণ প্রসঙ্গে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কমিশন বেশি দায়ী।

তিনি আরও বলেছেন, কমিশন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদারককারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। তিনি মহাপরিচালক তথা কমিশনকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের কথা হলো, কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে না পারেন, তাহলে সেই ব্যর্থতার দায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না কেন? বলাই বাহুল্য, ব্যর্থতার দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্যান্য তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন হতে পারতেন।

ওদিকে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের অনুসন্ধান ও তদন্তের সংখ্যা কত, সমস্যা কোথায়, সমস্যা থাকলে তা কোন পর্যায়ে-এসব বিষয়ে একটি গবেষণা শুরু হয়েছে।

কিছু ভুলভ্রান্তি রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে কোনো কর্মকর্তার যদি বড় ধরনের গাফিলতি থাকে অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কেউ যদি বিলম্ব ঘটায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আমরাও চাই, ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। উল্লেখ্য, দুদক আইনের ২০(ক) ১ ও ২ উপধারা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দুদক দেশে সংঘটিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এ সংস্থার কোনো কাজে দীর্ঘসূত্রতা প্রকারান্তরে দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে। ফলে দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কাজে গতি আনতে হবে। মূলত দুটি কারণে তদন্তকাজে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।

প্রথম কারণটি জনবল সংকট। দুদকে বর্তমানে অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছেন ২০০ জন। আর জনপ্রতি তাদের কাঁধে ৩০টি অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার সংখ্যার এই স্বল্পতা এক বড় সংকট বটে। এই সংকট দূর করতে হবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে।

দ্বিতীয় কারণটি হলো অন্যান্য সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতা। দুদকের মামলা যেহেতু করতে হয় ডকুমেন্টভিত্তিক, সেজন্য মামলার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার উচিত হবে ডকুমেন্ট ও তথ্য দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করা। সবার সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় দুদকের কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সূত্র: যুগান্তর