শিরোনাম
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স এমন জায়গায় যাবে যে জুডিশিয়ারিতে কোনো পেন্ডিং মামলা থাকবে না। কিন্তু এ প্রযুক্তির সৎ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
বুধবার (০১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, যখনই আমাদের ডিজিটাল কোর্টের প্রবর্তন হলো, আমার এখনো খেয়াল আছে ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম আমরা বিচারকরা ১০ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে টাকা দিয়ে বললাম, আদালতের (কোর্ট) কার্যক্রম তো চলছে না। সারা পৃথিবীতে কোর্ট চলছে। বাংলাদেশে শুধু কোর্ট চলছে না। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন ভার্চুয়াল কোর্ট করেন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টের আইন করা যে কতো কঠিন, সেই আইন আমরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে করেছি। এজন্য আমি আইনমন্ত্রী, বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ দিবো।
তিনি বলেন, আমরা সবাই বসে ভালো করে দেখেছি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে তারপর আইনটা করেছি। তারপর দেখা গেলো মন্ত্রিসভা বৈঠক আর হচ্ছে না। তখন প্রধানমন্ত্রীকে আবার অনুরোধ করার পরে তিনি তিনজন মন্ত্রীকে দিয়ে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে আমাদের আইনের জন্য যে অর্ডিনেন্স সেটা পাস করেছেন।
সুতরাং এতো স্বল্পতম সময়ে এবং পরে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, যেদিন আমার কাছে আসবে সেদিনই সঙ্গে সঙ্গে সই করে দেবো। সুতরাং এ স্বল্পতম সময়ে এ আইনটা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, আইনমন্ত্রীর কাছে আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবো- যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, জেলখানা আমার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু একটা করেন। এখন আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা কোর্টে যাবেন না। তারপর ভার্চুয়াল কোর্ট হওয়ার পরে এক লাখ লোকের জামিন হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্ট থেকে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, প্রথম আমাদের একটা মিস্টেক ছিল, ইউএনডিপির সহায়তা নিয়েছি। ইউএনডিপির রিসোর্স লিমিটেড, আর সরকারের রিসোর্স হচ্ছে আনলিমিটেড। ইউএনডিপির রিসোর্স দিয়ে বিচারকদের অ্যাপস দিতে পারিনি, সব কোর্ট কাজ করতে পারেনি। লজিস্টিকের এতো অভাব ছিল। এমনকি নিম্ন আদালতে তারা ফ্রি অ্যাপস দিয়ে কাজ করেছেন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেবো। তারা তখন ফ্রি অ্যাপসের মাধ্যমে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, তারপর আমি দেখলাম এটা তো সমাধান হতে পারে না। কারণ এই পেন্ডামিক কতোদিন চলবে তার কোনো ঠিক নেই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি তো ভার্চুয়াল কোর্ট করে দিয়েছেন। এখন তো ভার্চুয়াল কোর্ট ভালোভাবে চলছে না লজিস্টিকের অভাবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন- ‘এটা তো আমাকে প্রথমেই বলা উচিত ছিল। আপনার কতো টাকার প্রয়োজন।’ আমি বললাম আপাতত ১০ কোটি টাকা দিলে অ্যাপস কিনবো। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি কেউ ১০ কোটি টাকা চায়।’ আমি একটু লজ্জা পেলাম। তারপর প্রধানমন্ত্রী আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে বললেন, ‘প্রধান বিচারপতি যা কিছু চাইবেন, সব তাৎক্ষণিক দিতে হবে।’ এরপর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিমন্ত্রী সব দিয়েছেন। এরপর আমি সব কিছু চালু করতে পেরেছি। সুতরাং এটা আমার কাছে বেশি সাফল্য।”
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলেছিলাম, লাখ লাখ ফাইল আমাদের বারান্দায় পড়ে আছে। আমি একদিন আমাদের বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল তখন তিনি বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে নিয়ে দেখলাম লাখ লাখ ফাইল বারান্দায় পড়ে আছে। তারপর গেলাম ক্রিমিনাল সেকশনে। সেখানেও একই অবস্থা। এখান থেকে ফাইল খুঁজে বের করে কোর্টে দেওয়াটা দুঃসাধ্য কাজ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যদি এটা আর্কাইভ করে রাখতে পারি, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। আশা করি আমরা অচিরেই এটা করতে পারবো। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তার সঙ্গে আমি দুটি মিটিং করেছি। তিনি আমাদের ফুল সাপোর্ট দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, টাকা কোনো সমস্যা নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমাকে শুধু সুপ্রিম কোর্টের কাজ করার জন্য ২২০ কোটি টাকা দিয়েছেন। যেখানে আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট শুরু করেছি এক লাখ ডলার দিয়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন ২২০ কোটি টাকা। এখানে হচ্ছে একটা ডেটা সেন্টার। যেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে আমাদের সব কিছু থাকবে। এটার জন্য খরচ হবে ১৫০ কোটি টাকা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আরেকটা কথা বলবো, আমার উত্তরসূরি যে আসবেন, তিনি এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটাকে অনেক সামনে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের মুক্তি ভার্চুয়াল কোর্টে। কারণ আমাদের বিচারক সংখ্যা দু-তিনগুণ করা প্রয়োজন হবে। এখনও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিল্ডিং হয়নি সব জায়গায়।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে বিচারবিভাগ পৃথক হয়েছে। এখনো সব জায়গায় ভবন হয়নি। আমরা বিচারক দু-তিন গুণ করবো। তাদের কোথায় বসাবো। একমাত্র ভার্চুয়াল কোর্ট যদি প্রবর্তন করা যায় তাহলে বিচারকের বাসায় থেকে আদালতের কাজ চলবে। এজন্য আইনজীবীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাহলে অচিরেই আমরা মামলারজট থেকে মুক্তি পেতে পারবো। তাছাড়া মামলার জট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন ব্যাপার। যেমন- এফিডেভিট সেকশনে আসতে হয়, চেষ্টা করা হবে আইনজীবীর চেম্বারে আইনজীবী এনআইডির সঙ্গে সমন্বয় করে যদি করা যায় তাহলে এফিডেভিট সেকশনে আসতে হবে না।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এর ফলে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাবে। ভারতে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাচ্ছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে আমার যে উত্তরসূরি আসবেন তিনি যদি এটা করেন তাহলে বিচার বিভাগে একটা বিপ্লব ঘটবে। শুধু তাই নয়, এখন আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স যে জায়গায় যাচ্ছে, শুধু মুখে কথা বলবেন লেখা হয়ে যাবে, কষ্ট অনেক কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স এমন জায়গায় যাবে যে জুডিশিয়ারিতে কোনো পেন্ডিং মামলা থাকবে না। কিন্তু এ প্রযুক্তির সৎ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার পরে যারা এ দায়িত্বে আসবেন, আশা করবো তারা এ কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।