শিরোনাম
চিত্রনায়িকা পরীমনিকে মারধর, বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানির জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য রয়েছে। এদিন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এ চিত্রনায়িকা পরীমনি অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন।
পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জানা রিফাত সৌরভী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আজ (বুধবার) সকাল ১০টায় পরীমনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হবেন। এদিন অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে আসামিদেরও আদালতে হাজির হওয়ার দিন ধার্য রয়েছে।
এ মামলায় নাসির ও অমি ছাড়া শহিদুল আলম নামে আরও এক আসামি পলাতক রয়েছেন।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন।
এর আগে গত ১৪ জুন ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ১৫ জুন সাভার থানার পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। নাসির ও অমি মাদক মামলায় রিমান্ডে যাওয়ায় ওই দিন রিমান্ড শুনানি হয়নি। মাদক মামলায় রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তাদের পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার মামলায় করা রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। ২৩ জুন (বুধবার) ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান শুনানি শেষে তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৯ জুন পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমীদা তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরীমনির বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।
অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।
এজাহারে আরও বলা হয়, তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন ও কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
এজাহারে আরও বলা হয়, এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।
এজাহারে পরীমনি বলেন, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করেন। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান। তিনি অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টায় আমি আমার গাড়িতে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।
সূত্র: জাগো নিউজ