বিমান পাইলট ও বাপা প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন মাহবুব চাকরিচ্যুত

ফানাম নিউজ
  ৩০ নভেম্বর ২০২১, ২২:৩৩

রহস্যজনক কারণে বিমানের সিনিয়র পাইলট ও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেছে বিমান। মঙ্গলবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চাকরিচ্যুতির এ আদেশ জানানো হয় তাকে।

চিঠিতে তার চাকরিচ্যুতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে অ্যাসোসিয়েশেন অব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের আটিক্যাল ৫৯(বি)-এর ক্ষমতা বলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এই চাকরিচ্যুতির আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিমানের ২৬৫তম বোর্ড সভার দেওয়া ক্ষমতা বলে বিমানের এমডি এ চাকরিচ্যুতির আদেশ দেন।

চিঠিটি দুপুরেই তড়িঘড়ি করে মেইলযোগে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে— ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানে চাকরি করাকালীন কোনো বকেয়া পাওনা থাকলে তাকে তার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর করতে বিমানের অ্যাডমিন শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকরিচ্যুতির ঘটনায় গোটা বিমানজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আতঙ্ক নেমে এসেছে পাইলটদের মধ্যে। এ ঘটনায় বিকালে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাপা নির্বাহী কমিটি। শুধু বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখাই নয়, এ ঘটনায় বিমানের সব বিভাগজুড়ে কর্মচারী কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে এসেছে। 

পাইলটরা বলেছেন, এ ঘটনায় বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। কারণ এরকম আতঙ্ক নিয়ে যে কোন পাইলটের পক্ষে ফ্লাইট পরিচালনা বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ। হাজার হাজার কোটি টাকার উড়োজাহাজ এবং শত শত যাত্রীর জীবন নিয়ে যেসব পাইলট আকাশে উড়েন এ অবস্থায় তারা চরম আতঙ্কিত। তারা আরও বলেন, ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানের সব পাইলটদের পক্ষে আন্দোলন করেছেন। নিজের জন্য কোনো কিছুই করেননি। বাপার পুরো নির্বাহী কমিটি ও এবং বাপার সব সদস্যদের জেনারেল মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাপ্টেন মাহবুব মিডিয়ায় কথা বলেছেন।
  
বাপার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কোনো ধরনের অগ্রিম নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ তড়িঘড়ি করে একটি রেজিস্টার্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে টার্মিনেট করা সম্পূর্ণ অবৈধ হয়েছে। বিমানের এমডি কোনোভাবেই এ আদেশ দিতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো কর্মকর্তা কিংবা পাইলটকে চাকরিচ্যুতি করা যায়; কিন্তু সেজন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হবে। তাকে নোটিশ দিতে হবে। অভিযুক্ত সেই নোটিশের জবাব দেবেন। এভাবে যে কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুতির আগে তাকে কোনো ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়নি।

তবে বিমানের পক্ষ থেকে এই চাকরিচ্যুতির ঘটনায় কোনো কারণ উল্লেখ না করা হলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে সম্প্রতি বিমানের কাতার, দুবাই, ওমান ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট সিডিউল লণ্ডভণ্ড হওয়ার ঘটনার সঙ্গে বাপা সভাপতির হাত রয়েছে বলে বিমান ম্যানেজমেন্ট মনে করছেন। ম্যানেজমেন্টের ধারণা বাপা সভাপতির নেতৃত্বে পাইলটরা কৃত্রিম পাইলট সংকট তৈরি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পাইলটদের বেতন সমন্বয় না করায় পাইলটরা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট করবেন না বলে এর আগে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। পাইলটরা বলেছেন, বারবার আন্দোলন করার পরও বিমান ম্যানেজমেন্ট পাইলটদের দাবি পূরণ করছেন না। এ কারণে তারা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট এবং ৮ দিনের কম ডে-অফ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
 
পাইলটদের অভিযোগ ছিল— করোনাভাইরাসের কারণে অর্থ সাশ্রয় করতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে পাইলটদের বেতন কর্তনের যে সিদ্ধান্ত ছিল কর্তৃপক্ষ সেটি সমন্বয় করেছে। কিন্তু ওভারসিস এলাউন্স উড্ডয়ন ঘণ্টার অনুপাতিক হারে প্রদানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটি বাতিল করেনি। অথচ ওভারসিস এলাউন্স তাদের মূল বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি উড্ডয়ন ঘণ্টার আনুপাতিক হারে বণ্টন সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা করতে গিয়ে জুনিয়র পাইলটদের ৪৮ শতাংশ এবং সিনিয়র পাইলটদের মূল বেতনের ২২ শতাংশ কমে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাপা সভাপতি হিসেবে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। ধারণা াকরা হচ্ছে এর জের ধরেই এ চাকরিচ্যুতির আদেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বাপা সভাপতি ও ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আইনানুযায়ীই তার চাকরিচ্যুতির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ফ্লাইট পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো পাইলট যদি আতঙ্কিত বোধ করেন কিংবা অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তিনি নিজকে সিক ঘোষণা করতে পারেন। ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ তখন তাকে ফ্লাইট দেবে না। তবে পুরো অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ হবে এটা ঠিক না।

সূত্র: যুগান্তর