শিরোনাম
সংবাদ তৈরিতে পুরুষ সাংবাদিকদের আধিপত্যই বেশি। শতকরা ৯০ দশমিক ৩ ভাগ বাইলাইন সংবাদে সাংবাদিক ছিলেন পুরুষ। অপরদিকে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ সংবাদে ছিলেন নারী। অন্যদিকে টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপনায় নারীদেরকেই বেশি দেখা গেছে। এতে করে গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) এবং বাংলাদেশ প্রেস ইন্সিটিটিউটে (পিআইবি)-এর যৌথ উদ্যোগে ‘সংবাদে জেন্ডার ভিত্তিক উপস্থাপনা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে চলতি বছরে সাকমিড ও প্রাইমড (প্রটেক্টিং ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্পের ‘ইনক্লুশন’ থিমের আওতায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংবাদের বিষয়বস্তুতে কীভাবে জেন্ডারকে উপস্থাপন করছে সে বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছে।
প্রসঙ্গত, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ফ্রিপ্রেস আনলিমিটেড (এফটিইউ)-এর অংশীদার হিসেবে সাকমিড বাংলাদেশে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ‘প্রাইমড’ প্রকল্পে নিয়োজিত হয়েছে। দেশে ৬টি নির্বাচিত মিডিয়া হাউসের জেন্ডার সম্পর্কিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করে তারা। এর অংশ হিসেবে সাকমিড ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের কিছু সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে। সেটার ভিত্তিতেই ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
অনুষ্ঠানে পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। নারী পাতা এখন নেই বললেই চলে। যা আছে তাতে রান্না, শিশুস্বাস্থ্য নিয়েই বেশি লেখা যায়। নানা ঘটনায় মেয়েদের পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন নিয়ে কাজ হচ্ছে। তারপরও গত দুই দশকে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এ গবেষণায় নতুনত্ব আনা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণেও গুরুত্ব দিতে হবে।’
ওয়ার্ল্ড ভিশনের উপপরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, ভাষার মাধ্যমে ক্ষমতার চর্চা করা হয়। আমরা ছোটবেলা থেকেই একটি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হয়েছি। অনেক সময় অবচেতনে কিছু শব্দ ব্যবহার করে ফেলি যা উচিত নয়। তাই ভাষার ব্যবহারে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রয়োজনে নতুন শব্দও বলা যেতে পারে। এতে বাংলা একাডেমির সহায়তাও নেওয়া যেতে পারে।
প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টেলিভিশনের পর্যবেক্ষণকৃত মোট ৪৯৩টি সংবাদের মধ্যে ৩১৫টি সংবাদেই উপস্থাপক ছিলেন নারী। অন্যদিকে সংবাদে নারীদের ভুক্তভোগী হিসেবেই বেশি দেখানো হয়। ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, খুন ইত্যাদির ভুক্তভোগী হিসেবে দেখানো হয়েছে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞ বা মুখপাত্র হিসেবে তাদের তেমন দেখাই যায়নি। মাত্র ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে মুখপাত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, নারীর নিজের পরিচয় সংবাদে তেমন একটা উঠে আসে না। মোট ৩০ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরা পরিবারের পুরুষ সদস্যের পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংবাদে নারীদের মতামত গ্রহণের হারও কম। সংবাদগুলোতে পুরুষের উদ্ধৃতি এসেছে মোট ৬০ শতাংশ। নারীদের এসেছে মাত্র ৩৩ শতাংশ। টেলিভিশনে পুরুষের ‘ভক্সপপ’ এসেছে ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নারীদের ‘ভক্সপপ’ এসেছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, মাত্র ১ দশমিক ১৯ শতাংশ সংবাদ জেন্ডার বিষয়ে সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন