শিরোনাম
করোনাকালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার অযুহাতে বাল্য বিয়ের ব্যাপকতা বেড়েছে কুড়িগ্রামে। স্কুল খোলার পর মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে নিয়ে দেশব্যাপি কুড়িগ্রাম সবসময় আলোচিত। একটি আলোচনা থামতে না থামতে আরেকটি আলোচনার জন্ম হয়। কুড়িগ্রামের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একজন বাদে অন্য মেয়ে শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ের আলোচান থামতে না থামতে আবার আলোচনায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টিতে করোনাকালে বিয়ে হয়ে গেছে ৮৫জন মেয়ের। ফলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। সূত্র: আরটিভি
প্রতিষ্ঠানটির মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। এ বিষয়ে একটি জরিপ চালিয়ে তথ্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জরিপ অনুযায়ী, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২জন, সপ্তম শ্রেণির ১১জন, অষ্টম শ্রেণির ১৭জন, নবম শ্রেণির ২৮জন, দশম শ্রেণির ১৪জন ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জনের বিয়ে হয়ে গেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল ৭০- থেকে ৯০ শতাংশ । এখন উপস্থিতি ৪০-৫০ শতাংশ।
ওই প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুপুর ,আশামনি,নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানান, ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার প্রথম দিনেই ক্লাসের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের মন খারাপ হয়ে যায়। তারাও বাল্য বিয়ে নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, অনেক দিন পর স্কুল খুললো সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করবো, আনন্দ করবো কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুলে এসে দেখি ২৮ জন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। তারা স্কুলের পরিবর্তে এখন শশুর বাড়িতে ঘরসংসার করছে।
বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যান চালক বাদশা মিয়া জানান, বাহে আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা করি। জানেনতো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভাল একনা আলাপ আসছে তাই মোর মেয়েটা বিয়ে দিছং বাহে।
বাল্যবিয়ের শিকার আরেক শিক্ষার্থী নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকানিক বাবলু মিয়া জানান, দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল সারিয়ে দিয়ে যা পাই তা দিয়েই কোন রকমেই চলে সংসার। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল, দুচিন্তার শেষ নাই। তা একনা ভাল সমন্ধ পাওয়ায় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।
বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়িও যাচ্ছি। ওই সব শিক্ষার্থী যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাকদের সচেতন করছি। তিনি আরও জানান, করোনার আগে গত দেড় বছরেই তার স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ জন্য শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি। কিন্তু করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় গোপনে প্রতিষ্ঠানের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে দিয়ে দিয়েছেন পরিবার।
ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি দু:খজনক। উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সভা-সমাবেশ প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।