শিরোনাম
‘মাইনু কই? মাইনু! আয়, তোরে ভালো কলেজে ভর্তি করমু। আমার পোতে আজক্যা দুপুরেও আমারে কইছে, আব্বারে ভালো কলেজে ভর্তি করবানা? আমি কইছি দিমু।’
‘কইছি, বাজান তুমি কলেজের পোলাপানের সঙ্গে সুন্দরভাবে থাকবা। ভালো কলেজে দিমু গো, আমার পোতের কতো আশা। ভালো কলেজে দিতাম গো।’
সোমবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টায় এভাবে প্রলাপ করছিলেন প্রায় তিনঘণ্টা আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মাঈনুদ্দিনের বাবা। রামপুরা তিতাস রোডে নিহতের বাবা আব্দুর রহমান ভান্ডারীর ভাড়া বাসায় তখনও শত শত মানুষ। নেই শুধু আদরের ধন ছোট ছেলে মাঈনুদ্দিন।
নিহত মাঈনুদ্দিনের মরদেহ তখন সড়ক থেকে তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে রামপুরায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হয় মাঈনুদ্দিন।
মেধাবী ছেলেটির স্কুলের খাতায় নাম মঈন ইসলাম। রামপুরার একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর বাণিজ্য শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। পড়াশোনা শেষ করে হতে চেয়েছিল প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা।
মাইনুদ্দিনের বাড়িতে তার বড় ভাইয়ের শ্যালক বাদশা মিয়া বলেন, মাঈনুদ্দিনের বাবা চায়ের দোকান চালান বাড়ির পাশে তিতাস রোড়েই। রাত ৯টা পর্যন্ত বাবার চায়ের দোকানেই কাজে ব্যস্ত ছিল সে। এরপর দোকান থেকে বেরিয়ে বন্ধুর বাড়িতে রামপুরা বাজার এলাকায় যায়। ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের সময় নিহত হয়।
এরপর পথচারীরা মাঈনদ্দিনের ফোন থেকে পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে জানায়। প্রথমে মঈনুদ্দিনের দুলাভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে মঈনুদ্দিনের ছিন্নভিন্ন শরীর রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর পরিবারের অন্যান্য লোকজন সেখানে পৌঁছায়।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাঈনুদ্দিন সবার ছোট। বড় ভাই মনির ছোট একটি চাকরি করেন। মূলত সংসার চলে বাবার টিনের ছোট্ট চায়ের দোকানের আয় থেকেই। বড় ভাই ভালো কিছু না করার কারণে এ সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিল সে।
তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। প্রায় ১৫ বছর রামপুরা এলাকায় বসবাস করছে তার পরিবার। স্কুল জীবন ও বাবার চায়ের দোকানে সহযোগিতা করার কারণে ওই এলাকায় বেশ পরিচিত ছিল মাঈনুদ্দিন। ছিল মেধাবী ছাত্রও।
এদিকে মাঈনুদ্দিন নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে রামপুরা বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মধ্যরাত পর্যন্ত এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে দোষীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ঘাতক বাসের চালককে আটক করা হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক জানায় পুলিশ।
বাসে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুরের বিষয়ে মাঈনুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সহিংস কোনো ঘটনার জন্য পরিবারের কেউ দায়ী নয়। খবর পেয়ে যখন পরিবারের লোকজন মরদেহের কাছে পৌঁছায়, তার আগেই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনগণ।
সূত্র: জাগো নিউজ