শিরোনাম
রাজধানীতে বছরব্যাপী মশার উপদ্রবের বিষয়টি বহুল আলোচিত। জনমনে এডিস মশার আতঙ্ক কাজ করলেও যে কোনো মশার বৃদ্ধিতেই তাদের আতঙ্ক বেড়ে যায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন করোনাভাইরাস মোকাবিলা এবং ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যতটা তৎপর ছিল, কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের তেমন তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেই মশার ৭৫০টি হট স্পট চিহ্নিত হয়েছে। এখনো ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন ৮০ থেকে ৯০ জন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিউলেক্স মশার উৎপাত। একজন নাগরিকের পক্ষে কোনটি এডিস আর কোনটি কিউলেক্স মশা তা শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ফলে যে কোনো মশার অতিরিক্ত উপদ্রবে মানুষ ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সেই পুরোনো কথা-দমনের চেষ্টা চলছে, কিউলেক্স নিয়ন্ত্রণে থাকবে; যদিও সময়ের চাহিদার তুলনায় মশক নিধনে কার্যক্রম বিশেষভাবে দৃশ্যমান নয়। অক্টোবর ও নভেম্বরে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার ঢাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়বে, এমনই আশঙ্কা কীটতত্ত্ববিদদের। কাজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত রাজধানীবাসী এখন মহামারি, ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব, শীতকালীন ধুলাবালুর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এর সঙ্গে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নগরবাসীর কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত বছর কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মশা জন্মেছিল। এবার এটা আরও বেশি হতে পারে, এমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ পরিস্থিতিতে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা থেকেই যায়।
বর্তমানে রাজধানীবাসী বাসাবাড়ি-কর্মস্থল কোথাও কিউলেক্স মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ স্প্রে করেও মশার হাত থেকে নিস্তার মিলছে না। কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে জলাশয়, নর্দমা ও আবর্জনা পরিষ্কার করার পাশাপাশি লার্ভা নিধন গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কার্যক্রম জোরদারভাবে চালানো হচ্ছে দাবি করা হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের কাজ লোক দেখানো। প্রধান সড়কের পাশ ধরে ওষুধ স্প্রে করা হলেও ভেতরের গলিতে মশক নিধন কর্মীদের খুব একটা দেখা মেলে না। অভিযোগ রয়েছে, অভিজাত এলাকাকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, অন্য এলাকাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
জলাশয়সহ মশার প্রজননের জায়গাগুলো সারা বছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা না হলে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বদ্ধ জলাশয়, কাভার্ড ড্রেন, বক্স-কালভার্ট, প্লাস্টিক বর্জ্য ও ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-বাসাবাড়ি, অফিস, বাজার, উন্মুক্ত স্থান, সড়ক, পার্ক, খেলার মাঠ, সর্বত্রই এখন মশার রাজত্ব। সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্য বছর জানুয়ারিতে কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। এবার নভেম্বরে সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টিকে দুই সিটি কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। গণমাধ্যমে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও এই মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন ভূমিকা লক্ষ করা যাচ্ছে না। মানুষ মশা মারার ওষুধের মান নিয়ে বিতর্ক শুনতে চায় না। তারা মশার উৎপাত থেকে রেহাই চায়। মশার কামড় থেকে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। সূত্রঃ যুগান্তর