শিরোনাম
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এজন্য চার বছর আগে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাজউক। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজই শুরু হয়নি। যদিও এ প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র এক বছর।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক’ প্রকল্পের আওতায় ওই ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করার কথা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস অ্যান্ড কনসোর্টিয়াম। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য রাজউকের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বিদেশি ওই প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের অন্যতম প্রধান বহুতল ভবনবিশিষ্ট আবাসন।
চুক্তির চার বছরেও কেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রাজউকের সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কের সদ্যবিদায়ী প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অনেক বড় আকারের এ প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত করাসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজে সময় লেগেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সময়মতো কাজ শুরু করতে পারেনি বিএনজি।
তিনি বলেন, চুক্তির পর নির্মাণ সরঞ্জামাদি আমদানিতে শুল্ক মওকুফ চায় বিএনজি। এতে অনীহা প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অথচ সব খরচ বিএনজির বহন করার কথা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জে ৩৮১ একর জমি নিয়ে ঝিলমিল আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কের জন্য বরাদ্দ ১৬০ একর জমি। এই জমিতে মোট ৮৫টি ভবন নির্মাণ করবে বিএনজি। ভবনগুলোর মধ্যে ৬০টি হবে ২০ তলা (সেমি বেসমেন্টসহ) ও ২৫টি হবে ২৫ তলার (বেসমেন্টসহ)। মোট তিনটি শ্রেণিতে ফ্ল্যাট হবে ১৩ হাজার ৭২০টি। এর মধ্যে ‘এ’ শ্রেণির এক হাজার ৫৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট হবে নয় হাজার ১২০টি, ‘বি’ শ্রেণির এক হাজার ৭৫০ বর্গফুটের হবে দুই হাজার ৫৭৬টি এবং ‘সি’ শ্রেণির দুই হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট হবে দুই হাজার ২৪টি।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ৯৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। পুরো টাকা বিনিয়োগ করবে বিএনজি। এরপর ছয় কিস্তিতে বিনিয়োগের টাকা পরিশোধ করবে রাজউক।
বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিলমিল আবাসিক এলাকা। এর পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। তবে সম্প্রতি সরেজমিনে রেসিডেন্সিয়াল পার্কের কোনো স্থাপনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো ঝিলমিল এলাকা লতাপাতা, গাছপালা এবং জঙ্গলে ছেয়ে আছে। প্রকল্প এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি।
রাজউকের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নকশা অনুযায়ী ঝিলমিল আবাসিক এলাকার ঠিক মাঝে ১৬০ একর জায়গায় হবে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক। এলাকার ভেতরে চলাচলের জন্য ১২ দশমিক ১৯ মিটার থেকে ৩৬ দশমিক ৫৮ মিটার প্রস্থের রাস্তা তৈরি করা হবে। এলাকার চারপাশে মোট ছয়টি প্রবেশপথ থাকবে। মূল প্রবেশপথের সামনে থাকবে ৬০ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের রাস্তা। এটি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে এখান থেকে ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ সহজ হবে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রোডের সঙ্গে যুক্ত হবে এ প্রকল্প।
প্রকল্পের সুবিধা
রাজউক ও বিএনজির চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং সিস্টেম’ প্রযুক্তির মাধ্যমে এ ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। ভবনগুলোতে ইটের ব্যবহার থাকবে না। পুরো কাজ হবে আরসিসি ঢালাই দিয়ে। এতে ভবনগুলো মজবুত ও ভূমিকম্পসহনীয় হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকার মোট জমির ৩২ শতাংশে থাকবে ভবন, বাকি ৬৮ শতাংশ উন্মুক্ত। সেখানে লেক, পার্ক, খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, জগিং ট্র্যাক, কৃত্রিম ঝরনা, রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এখানে যারা বাস করবেন তাদের জন্য স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, মার্কেট, কমিউনিটি স্পেসের ব্যবস্থা রাখা হবে।
ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু হয়নি
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হলে প্রতি বর্গফুট প্রায় পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করবে রাজউক। এই হিসাবে ‘এ’ শ্রেণির এক হাজার ৫৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের দাম হবে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এসব ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হবে। লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে থাকবে কিস্তি সুবিধা।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ওহিদ সাদিক শুভ। প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবশেষ গত ১৭ নভেম্বর বিএনজির সঙ্গে জুমে বৈঠক হয়েছে। তারা আগামী মাসে (ডিসেম্বরে) বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন। তখন প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে।
সূত্র: জাগো নিউজ