শিরোনাম
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা নিয়ে রিটের ওপর জারি করা রুলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এর ফলে, হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল থাকলো। এতে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগে কোন বাধা নেই। তারা কাজে যোগদান করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ। একইসঙ্গে তাদের লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে।
রিটকারীদের করা আপিল শুনানির নির্ধারিত দিনে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুণ্ডু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ।
এর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক ২০টি রিটের ওপর রুল জারি করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য দুপুর ১২টায় সময় ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক ২০টি রিটের ওপর জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান চেম্বার জজ আদালত।
রিটকারীদের করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে গত শনিবার (১৮ সেপ্টম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বারজজ আদালত শুনানির জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেন।
আদেশে ওইদিন চেম্বারজজ আদালত, সিভিল পিটিশনটি শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ না দিতে বলা হয়েছিল। সেইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন চেম্বার বিচারপতি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক হজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক ২০টি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল গত ১৬ সেপ্টেম্বর খারিজ করে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ। ফলে এক হাজার ৬৫০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ বলে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ মোর্শেদ।
পরে উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন সংক্ষুব্ধ রিটকারীরা। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়। আজ সেটি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি এক হাজার ৬৫০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সব ধরনের পরীক্ষা শেষে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ফল প্রকাশ করা হয়। এতে কোটা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করে প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৪ প্রার্থী।
ওই আইনজীবীরা আরও জানান, এতে ফল না পেয়ে মো. রাশেদুল ইসলামসহ চাকরিপ্রার্থী ৩৪ জন রিট আবেদন করেন। পরবর্তীতে আরও অনেকে রিট করেন। ওই সব রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুন্ডু বলেছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণে এক হাজার ৬৫০ কর্মকর্তার নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেন। ওই খবর পেয়ে রিটকারীরা আপিল আবেদন করেন। ওই আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি।
এর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় গত ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত থেকে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ নিয়োগে স্থিতাবস্থা জারি করেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট তা খারিজ অর্থাৎ নিয়োগ আদেশ বৈধ বলে ঘোষণা করেন। ওইদিনই ডিএই দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালকদের বরাবর চিঠি ইস্যু করে। এতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত এক হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী হতে স্ব-স্ব অঞ্চলের অধীনে নির্বাচিত প্রার্থীদের রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র জারি করাসহ ওইদিনই যোগদানের আদেশ দেন।
ব্যারিস্টার সুব্রত বলেন, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে এক হাজার ৬৫০টি স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ২৮ হাজার ৫৩৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ৫১১৪ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার দুদিনের মাথায় ১৭ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এক হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী নির্বাচন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
রিটকারীরা বলছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৬নং শর্তাবলির কলামে জেলা কোটাসহ সরকার কর্তৃক পরিচালিত অন্যান্য সব কোটা বিধি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু টাঙ্গাইল গোপালগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় তা অনুসরণ করা হয়নি। সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের একটি অংশ হাইকোর্ট বিভাগে জেলা কোটাসহ অন্যান্য কোটা অনুসরণ না করার কারণে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন এবং উক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা দেন।