শিরোনাম
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আবরারের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রবিবার (২৮ নভেম্বর) মামলাটির রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
এ দিন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আসামিরা খালাস পাবে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যেন হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুনানির সময় আবরারকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে শুরু করে সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপস্থাপন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তা না হলে এতদিনে রায় হয়ে যেতো। আদালত খোলার পর আমরা দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করেছি।’
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘২৮ তারিখ কী হবে সেটা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার উদ্বেগে আছি। মামলাটি চলছে দুই বছর দুই মাস হলো। আমরা চাই রায়ে যেন সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। অনেক আসামি ১৬৪ প্রত্যাহার করেছে। আশা করি আসামিরা ন্যায়বিচার পাবে।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এরপর বিচারক ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির পুনরায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আবেদন করেন। পরে অভিযুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ১৪ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
মামলায় মোট ৪৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়।
এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এর বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক আছে তিনজন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এজাহারে থাকা আসামিরা হলো—মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।
এজাহার বহির্ভূত ৬ আসামি—ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।
পলাতক আছে—মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত আসামি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাত তিনটার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন